শিরোনাম

শাল-পিয়ালের দেশ ভালকি মাচান

নীল আকাশের নিচে শাল, পিয়ালের রাজ্য হল ভালকির জঙ্গল। শীতের শুরুতে সেই সৌন্দর্যকে রাঙিয়ে তোলে সোনা ঝুরি ফুল। দেখে মনে হয় সবুজের ক্যানভাসে কেউ যেন মুঠো মুঠো হলুদ রঙ ছুঁড়ে মেরেছে। নিশ্চল চোখ কথা শোনেনা। শহুরে কোলকাতার এত কাছে গাছের সাথে গল্প জমানোর আদর্শ ঠিকানা ভালকি মাচান-এর কথা অনেকেই জানেন না। সময়ের চোখ রাঙানো ফাঁকি দিয়ে চুপ চাপ নিশ্চিন্তের কটা দিন কাটানোর আদর্শ ঠিকানা ভালকি।
ইতিহাস: ইতিহাস খুবই ছোট, নেই বললেই চলে। সবাই চেনে ভালকি মাচান বলে। বর্ধমানের রাজারা যেখানে মাচা বেঁধে ভালুক শিকার করতেন,সেই স্তম্ভের নাম ভালকি মাচান । আবার অনেকে বলেন, আসলে ভল্লু রাজা মাচা তৈরি করে এই জঙ্গলের এই নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ম করে শিকারে আসতেন। পোড়া ইটের তৈরি সেই দুর্গ এখনো আছে।
প্রকৃতি: ভালকি মাচান জঙ্গলে দেখা পাবেন এক ছায়া ঘেরা সরোবরের । দেখে মনে হতেই পারে, একদা এরকম সরোবরে জ্যোৎস্না রাতে স্নান করতে আসতো ডানাওয়ালা পরীদের দল। অজস্র জংলী ফুলের খাস মহল। লাল মাটির ওপর পিচের রাস্তা। জঙ্গলের মাঝে মাঝে উঁকি মারে ছোট ছোট গ্রাম। ভালকির জঙ্গল কোথাও বেশ চওড়া,কোথাও বা একেবারে সরু হয়ে গ্রাম ছুঁয়ে অজয় পেরিয়ে সোজা চলে গেছে ঝাড়খণ্ড। ধামসার আওয়াজ ভেসে আসে বহুদূর থেকে। আগে থেকে বলে রাখলে নাচের দলও পাওয়া যায়। সন্ধ্যায় হোটেল প্রাঙ্গণে সেটা তাহলে বাড়তি আকর্ষণ।  বাস করে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ। নিস্তব্ধ চারিদিকে তখনি মুখরিত হয় যখন বুন হাওয়া অধিবাসীদের ধানক্ষেতের মাথা ছুঁয়ে যায়। বাঙালী মন রোমান্টিক হলেই আশ্রয় খোঁজে রবি ঠাকুরের দু কলি গুণ গুণ করার জন্য।
অজয়ের পাড়ে শাল, পিয়াল, মহুয়া সবাইয়ের মিলে মিশে সংসার। সারা বছরের পাখিদের সাথে জোট বাঁধে শীতের শুরুতে আশা পর্যটক লাল ঠোঁট টিয়ার দল। বনের বাসিন্দা বলতে বুনো শুয়োর,বন মুরগী,হায়েনা,শিয়াল ও খরগোশ। 
খাওয়া দাওয়া: আগে থেকে বলে রাখলে সকালের চা থেকে শুরু করে সব খাবারই পাওয়া যায় হোটেলে। হোটেল কর্মীরাই ব্যবস্থা করে দেন। এমনকি বন মুরগিও আপনার পাতে এসে যাবে।
যাতায়াত: শান্তিনিকেতন-গামী ট্রেনে বর্ধমানের পরে গুসকরা অথবা,আসানসোল-গামী ট্রেনে মানকর স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে ।  এখান থেকে গাড়ি নিতে পারেন। স্টেশন থেকে ভাড়া গাড়ি। ৪০০/৪৫০ টাকার মধ্যেই ভাড়া। দরদাম করলে কমতেও পাড়ে। আর যদি বর্ধমানে নেমে পড়েন,তবে বর্ধমান থেকেও গাড়ি নিতে পারবেন । ব্যক্তিগত গাড়িতে এলে সুবিধা বেশি।
থাকা: আম্রপালি অথবা অরণ্য সুন্দরী হল এখানে থাকার জায়গা।
আম্রপালি-পারাজ পেরিয়ে অভিরামপুর নামে যে ছোট্ট বাজার এলাকা, সেখানে বাম দিকে ঘুরে ১কিমি যমুনা দিঘি,সবুজ মাঠের মধ্যে বাম দিকে আম্রপালি রিসোর্টের গেট । আম্রপালি রিসোর্ট থেকে মাচান ৩ কিমি দূরে । আম্রপালির রিজার্ভেশন দেয় পশ্চিমবঙ্গ ফিশারিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন । সল্ট লেকে বিকাশ ভবনের নর্থ ব্লকের দোতলায় । মাত্র ৬০০ টাকায় ডাবল বেডের ঘর । অতি সাধারণ ঘর । বাথরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন,জলের সমস্যা নেই । সামনে চুয়াল্লিশটা পুকুর আছে।

অরণ্য সুন্দরী- মাচানের একেবারে তিন মিনিট দূরে পঞ্চায়েত সমিতির অরণ্য সুন্দরী রিসোর্ট । একেবারে জঙ্গলের ভেতরে ভালকির জঙ্গলে একমাত্র হোটেল অরণ্য সুন্দরীতে ডবল বেডের রুম আছে ৬টি। ভাড়া রুম প্রতি ৫০০র মধ্যে। ফোর বেডের দুটি রুমের ভাড়া ৮০০ করে। ৬শয্যার ঘর একটি। ভাড়া ১২০০ টাকা। আর ১৩ বেডের একটি বড়সড় ঘরও রয়েছে সেটি পাওয়া যাবে ২০০০ টাকায়। এসি রুম মাত্র দুটি। ভাড়া রুম প্রতি ৮০০টাকা করে। বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ-০৩৪৫২-২০০৬০৪/ ২০৩৫৯৭ মোবাইল-৯৪৩৪৫৩৭৫৪৫। এখানে থাকলে একেবারে জঙ্গলে থাকার অনুভূতি পাওয়া যাবে।
অন্যকিছু: মাচানের পাশ দিয়ে যে পাকা রাস্তা গেছে,সেই রাস্তায় প্রতাপ পুর নামে একটা অনুল্লেখ্য গ্রাম আছে । সে গ্রাম থেকে ডানদিকে ঘুরে লাল মোরামের রাস্তায় ঢুকে ৭/৮ কিমি জঙ্গলের পথ।  সেই লাল রাস্তা গিয়ে মিশেছে বন-নবগ্রাম নামে এক গ্রামে । সেখান থেকে ১১মাইল নামে এক বাস-স্টপে পৌঁছুলে পাবেন ইছাই ঘোষের দেউল। ৬ কিমি পিচ রাস্তা, তারপর ৩ কিমি লাল মোরামের রাস্তা পেরিয়ে ইছাই ঘোষের দেউল,অজয় নদের জলের উপর । মাচান থেকে দেউলের দূরত্ব খুব বেশী হলে ৩৯ কিমি । শালবনের ভেতর দিয়ে গাড়ি করে যেতে ফটো তোলার আদর্শ সব বিষয় পাবেন যা আপনাকে দু দণ্ড দাঁড়াতে বাধ্য করবে । দেউলে আছে দেউল পার্ক নামে এক রিসোর্ট । থাকার খরচ ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা প্রতি রাত্রি ।




1 comment: আপনার মন্তব্য

  1. Darun sob khobor details e diye beranor sincere lekha. Kono kotha hobe na darun lekha.

    ReplyDelete