ছবি ও লেখাঃ সন্দীপ বোস |
লেখক পরিচিতিঃ সঙ্গীতবিদ ও সঙ্গীত প্রশিক্ষক
প্রধান শিক্ষক রোলাল্ড মিউজিক স্কুল
প্রাক্তন মুখ্য গীটার বাদক ব্রিটিশ ব্যান্ড ‘থ্রু দ্যা স্ট্রম’
বর্তমান সদস্য ‘আন্ডার কভার’
কর্ণধার ‘কলকাতা স্কুল অব রক্’
সঙ্গীত
হল মানব চরিতের এক সহজাত ঘটনা। প্রকৃতিগত ভাবেই যা তৈরি হয়। প্রতিটি ছাত্রকে সাধারণত চারটি ধাপের মাধ্যমে সঙ্গীতের
শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। আমার মতে প্রথম ধাপটিকে ‘সংজ্ঞাহীন অজ্ঞতা’ বলা যেতে পারে।
এই
সময় ছাত্র তার হাতে থাকা গীটার বা অন্য যে কোন বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে তার মনে আসা
এলোমেলো সুর গুলিকে প্রকাশ করার চেষ্টা করে। বিশেষ করে জারা গিটার বাজানো শেখে
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। বিভিন্ন ভাবে গিটার বাজানোর
কায়দা গুলি রপ্ত করতে চায়। তার প্রিয় রক স্টারের সাথে নিজেকে তুলনা করে তাকে
অনুকরণ করে আনন্দ পায়। এই পর্যায়টা সঙ্গীত শিক্ষার্থীর কাছে অত্যন্ত সুখের
মুহূর্ত।
এর
কিছু মাস পরে শিক্ষার্থী কোন মিউজিক স্কুল বা কোন সঙ্গীত শিক্ষকের কাছে ভর্তি হয়।
তখন সে তার শিক্ষকের কাছে সুরের সঠিক বিষয় গুলি জানতে পারে। আর এই জানার
প্রক্রিয়াটা শিক্ষার্থীর কাছে মোটেই সুখের হয়না। শিক্ষা গুরুর মাধ্যমে ছাত্র স্কেল, কর্ড, সুর এবং ছন্দ সম্পর্কে সঠিক
জ্ঞান লাভ করে থাকে ।এই ধাপটিকে আমি ‘সচেতন অজ্ঞতা’
বলতে পারি।
তৃতীয় ধাপটি হল ‘সচেতন জ্ঞানতা’র। এই ধাপটিও মোটেই সুখকর
নয়। ছাত্রদের এই ধাপে কঠোর পরিশ্রমের দরকার হয়।
কিন্তু এই সময় সে জানে তাকে কি বাজাতে হবে, কি ভাবে বাজাতে হবে এবং কখন বাজাতে হবে।
শিক্ষার্থী এখন সবকটি স্কেল, কর্ড, সুর এবং ছন্দের সঠিক ব্যাবহার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
চতুর্থ এবং শেষ ধাপটি হল ‘সংজ্ঞাহীন জ্ঞানতা’ যা সকল শিক্ষার্থীকে এক সুখকর অনুভূতি দেয়। আমি ও আমার মত অসংখ্য সঙ্গীত
প্রেমীদেরকে এই পর্যায়ের সাথে পরিচিত হতে হয়। এখন আর কি বাজাবো, কি ভাবে বাজাব ও কখন বাজাবে তা নিয়ে আলাদা করে
ভাবতে হয়না। সুর ও তার মূর্ছনা মন ও মস্তিষ্ক থেকে শুধু আঙ্গুল বেয়ে নেমে আসে।
অতএব, প্রথম ও চতুর্থ ধাপ যতটা
আনন্দদায়ক দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ ঠিক ততটাই কঠিন। এই দুই ধাপই হল শিক্ষার মুল পর্যায়, যেখানে বিদ্যার্থীকে কঠিন শ্রম, উৎসর্জন, শৃঙ্খলা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে সময়ের পরিচালন করা একান্ত প্রয়োজন।
এখন এখানে সঙ্গীত শিক্ষা এবং এর বিভিন্ন সুবিধা
সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া যাকঃ
- সঙ্গীত ৩000 বছরেরও বেশি সময় ধরে সংস্কৃতি শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ হিসাবে গৃহীত।
- ‘সঙ্গীতের মাধ্যমে ব্রেইল পড়া আমাকে শ্রবণ ইন্ধিয়ের দৃঢ়টা ও স্মৃতি সক্তি বাড়াতে সাহায্য করেছে’- রে চার্লস।
- সঙ্গীত দক্ষতা সরাসরি বিদ্যাগত সচেতনতা এবং পড়ার উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত।
- ক্লান্তি উপশম, মানসিক চাপ কমাতে, হৃত্স্পন্দন প্রভাবিত সংবেদনশীলতা এবং সৃজনশীলতা উদ্দীপিত এবং কল্পনা প্রসারিত করতে পারে সঙ্গীত।
- ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অফ দি ইভালুয়েসান অফ এডুকেশন অ্যাচিভমেন্ট ( আই.ই.এ )-র মতে বিশ্বের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির মধ্যে সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলি নিজের স্থান করে নিয়েছে।
- "সঙ্গীত শিক্ষা শুধু আর অতিরিক্ত বিষয় নয়, সঙ্গীত এখন গঠনশিল শিক্ষার অংশ"-বারাক ওবামা । বিশেষজ্ঞদের মতে যে সব ছাত্ররা পিয়ানো বাজায় তারা বাকিদের তুলনায় গণিত ও বিজ্ঞানে পারদর্শী হয়ে থাকে (উৎস: স্নায়বিক গবেষণা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ১৯৯৭)
- কলেজ পড়ুয়াদের মধ্যে যারা সঙ্গীতের সাথে যুক্ত তারা তাদের বাকি সহ পাঠিদের থেকে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত হয় (হিউস্টন ক্রনিকলস)।
- প্রত্যেক বাবা-মায়েদেরই উচিত নিজের সন্তানকে সঙ্গীত সচেতন করে তোলা।
0 comments: