শিরোনাম

এক ছুটে শুশুনিয়া


একদিনের বেশি ছুটি পেলেই মনটা পালাই পালাই করে। আর পুজা এলেতো পালানোর অঢেল সুযোগ। কোথায় যাওয়া হবে বেড়াতে সেই নিয়ে আলোচনা, মিটিং, কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসা প্রথমে কোথায় যাবো, সেখান থেকে কোথায় কতদিন থাকবো। বেড়ানোর থেকে বেড়ানোর এই পরিকল্পনার আনন্দও নেহাত কম নয়। কিন্তু কর্পোরেট জামানায় ঘুরতে জাওয়ার সময় হাতে কম। তাই কাছেপিঠে কথাও চটজলদি মন ভরানোর দাওয়াই হল ওয়েস্ট বেঙ্গালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা। তাবলে মন খারাপের কিচ্ছু নেই। ছোট্ট ট্যুরের মধ্যে শুশুনিয়া বেশ উপযুক্তও। বাঁকুড়া জেলার ছাতনার অন্তর্গত শুশুনিয়া আপনাকে কয়েক দিনের মন ভাল করে দেওয়ার দাওয়াই।



শাল, সেগুন, অর্জুন, পলাশ, মহুয়া,বাবলা, আমলকী-র সবুজে ছাওয়া পাহাড় আর গ্রাম নিয়ে শুশুনিয়া। পাহাড়তো নয়, বড়সড় একটা টিলা। বয়সে হিমালয়ের চেয়েও প্রাচীন –সেই আর্কিয়ান যুগে জন্ম। ইতিহাসেও উল্লেখ রয়েছে এই শুশুনিয়ার কথা। একসময় রাজপুত রাজা চন্দ্রবর্মার দুর্গ ছিল পাহাড়ের মাথায়। ৪৪০ মিটার উঁচু এই পাহাড়ের পায়ের কাছে নির্জনে বয়ে চলেছে গন্ধেশ্বরী নদী। শুশুনিয়া গ্রামে কয়েক হাজার মানুষ বসবাস করেন। একটা হাইস্কুল আছে, লাইব্রেরি আছে, ব্যাঙ্ক আছে। ছাতনার বিপরীত দিকের রাস্তাটায় একটু এগিয়ে বাঁহাতে একটা রাস্তা চলে গেছে হুকুমিয়া গ্রামের দিকে। দু’পাশে সুন্দর শালের জঙ্গল। তিনমাথার মোড় থেকেই ডানদিকের সরু রাস্তাটা চলে গেছে একেবারে শুশুনিয়া পাহাড়ের নীচে যেখানে ঝরনার জলটা এসে পড়েছে। তার পাশ দিয়ে একটা পায়ে চলার পথ উঠছে ওপরে। অর্ধেকটার কিছুটা ওপরে পায়ে চলার পথটা শেষ হয়ে গেছে। পাহাড়ের একবারে মাথায় একটা ছোটমতো শিবমন্দির আছে। ঠিক ওপরে ওঠার আগেই একটা ঘনজঙ্গল। জঙ্গলে হনুমান আর বুনো শুয়োরের বাস। 

পাহাড়ের তলায়, ঝরনার আশেপাশে কয়েকটা দোকান আছে। এখানকার বাসিন্দারা পাথর কেটে নানান জিনিষপত্র তৈরি করেন, তারই সব দোকান। তিনমাথার মোড়ের কাছেও এরকম বেশ কয়েকটা দোকান আছে। তবে হুকুমিয়া গ্রামের কাছে শিলালিপি গ্রামে গেলে কারিগরদের কাজ একেবারে সামনে বসেই দেখা যায়। শুশুনিয়ায় আসার পথে ছাতনায় দেখে নেওয়া যায় বিশালাক্ষী বা বাসুলি দেবীর প্রাচীন মন্দিরটি। এই মন্দিরের পূজারী ছিলেন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন রচয়িতা বড়ু চন্ডীদাস। ছাতনায় চন্ডীদাসের নামে একটা কলেজ হয়েছে -বড়ু চন্ডীদাস মহাবিদ্যালয়। 
এক কথায় এই বারের পূজায় তিলোত্তমার কল্লোহল কাটিয়ে যদি একটু নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চান তাহলে শুশুনিয়া একটা মনের মতন ডেস্টিনেশন হত পারে।


যোগাযোগঃ নিকটবর্তী রেলস্টেশন ছাতনা। কলকাতা থেকে দূরত্ব ১৩২ কিলোমিটার। ছাতনা থেকে শুশুনিয়ার দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। ছাতনায় পৌঁছে শুশুনিয়া মোড় থেকে ট্রেকারে মিনিট ১৫-২০ লাগে শুশুনিয়ায় তিনমাথার মোড়ে পৌঁছাতে। বাঁকুড়া বা দুর্গাপুর থেকে বাসে বা গাড়িতেও শুশুনিয়া আসা যায়।
থাকাঃ এখানে থাকার জায়গা তিনটে-কোলে বাংলো, রামকৃষ্ণ লজ আর গ্রীন লজ। মোড়ের মাথায় বেশ কয়েকটা ঝুপড়ি দোকান আছে। দোকানগুলোয় বলে রাখলে রান্না করে রাখে।

0 comments: