কিছুদিন আগেই
ঘুরতে গেছিলাম তাদোবা আন্ধারী ন্যাশনাল পার্কে। যা প্রধানত ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্যই বেশি
পরিচিত। কিন্তু আজকে বাঘ মামার ছবি না দিয়ে তার জায়গায় দিলাম আমাদের কিছু পরিচিত
অপরিচিত পাখিদের ছবি। এর পরে অন্য কোন সময় না হয় বাঘের গল্প বলা যাবে।
দিনকণা
(ইন্ডিয়ান নাইটজার): বৈজ্ঞানিক নাম ‘কাপ্রিমুল্গুস অসিয়াতিকাস’। দেশের
প্রায় সব জঙ্গল বা সাংচুয়ারী গুলিতেই পাওয়া যায়। এরা দিনের বেলা চোখে বিশেষ দেখতে
পায়না। রাতে খুব ভালো দেখতে পারে। প্রধানত ছোট পোকা ধরে খায়। দিনের বেলা ছদ্মবেশ
ধরে বসে থাকে,যাতে অন্য পাখি বা জন্তু -জানোয়াররা সহজে আক্রমণ করতে না পারে।
সবুজ বাঁশপাতি
(গ্রীন বি-ইটার): বৈজ্ঞানিক নাম ‘মেরপ্স অরিয়েন্তালিস’। দেশের কোনও কোনও স্থানে
এটি 'সুইচোরা', 'নরুন চেরা' প্রভৃতি নামেও
পরিচিত। ‘ট্রিউ ট্রিউ’ তীক্ষ্ণ শব্দ
করে ডাকে। এরা মৌমাছি বা অন্য ছোট পোকা শিকারে খুব দক্ষ।
লম্বায় প্রায় ৮ ইঞ্চি দীর্ঘ সবুজ বাঁশপাতির গড়ন ছিপছিপে । গায়ের রঙ উজ্জ্বল
সবুজ। তবে মাথায় ও পিঠের ওপর দিকে আছে সোনালি পালক। ডানার নিচটা উজ্জ্বল তামাটে।
এর কৃষ্ণবর্ণ ঠোঁটটি একটু বাঁকানো। 'কাজলরেখা' রয়েছে চোখের
দুই পাশে যা ঘাড়ের সঙ্গে মিশে গেছে। পাখিটির থুতনি ও গলায়
কাছে রয়েছে নীল ছটা আর গলার নিচে আছে মালার মতো কালো টান। এর পায়ের রঙ কালচে।
লক্ষ্যণীয় যে সবুজ বাঁশপাতির লেজের মাঝ বরাবর দুটি পালক দুই ইঞ্চি পরিমাণ বড়।
বাঁশপাতি গাছে
বাসা বাধতে জানে না। এরা নদীর কূলে খাড়া জায়গায় গর্ত করে বাসা বানায়। প্রজনন
মৌসুমে গর্তের গভীরে স্ত্রী পাখি ৫-৭টি ধবধবে সাদা রংয়ের ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ
দুই পাখি মিলে ডিমে তা দেয়। বাচ্চা ফুটতে ২১-২৭ দিন সময় লাগে।
ধূসর ছড়াই (অ্যাসি প্রিনিয়া): বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্রিনিয়া সচিয়ালিস’। ভারতবর্ষ ছারাও নেপাল, বাংলাদেশ,ভূটান,শ্রিলাঙ্কা,মায়ানমার এ এদের
দেখতে পাওয়া যায়। এরা দেখতে খুব ছোট কিন্তু এদের ডাক খুব তীক্ষ্ণ। আজকাল জঙ্গল এর
বাইরেও গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়। ধান সর্ষে খেতে পোকা ধরে বেড়ায়।
ঝুঁটিত্তয়ালা বাজপাখি-ঈগল
(চ্যেঞ্জেবল হক ঈগল): বৈজ্ঞানিক নাম ‘নিসেতুস সির্র্হাতুস’। এদের মাথার ঝুটি দেখার মত।
চ্যেঞ্জেবল এর অর্থ হল পরিবর্তনশীল। চ্যেঞ্জেবল নাম এর কারণ এদের পলকের রঙ্গ পরিবর্তন হয় জায়গায়
জায়গায়। তাই এদের সঠিক ভাবে চেনা খুব শক্ত হয়ে দাঁড়ায়।
শাহ-বুলবুল (এশিয়ান প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার):
বৈজ্ঞানিক নাম তের্প্সিফনে পারাদিসী।
এশিয়ার মধ্যম আকৃতির প্যারাডাইস বার্ড। এরা দেখতে অনেকটা বুলবুলির মত।
কিন্তু এদের লম্বা লেজ দেখে এদের সহজেই চেনা যায়। পূর্ন বয়স্ক শাহ-বুলবুল ১৯-২০
সেমি লম্বা হয়। অন্য পাখিদের থেকে অনেকটা আলাদা রকম দেখতে। অসাধারণ সুন্দর এই
পাখির পুরুষ ও স্ত্রীর রং আলাদা হয়। পুরুষ (যা ছবিতে
দেখা যাচ্ছে)এর শরীর সাদা আর মাথা কালো। স্ত্রীর শাহ-বুলবুল এর পিঠের দিকের রঙ
খয়েরী,পেট এর
দিকটা সাদা আর মাথা কালো। চোখের আশেপাশে উজ্জল নিল রং মুগ্ধ করে দিতে বাধ্য।
নীলকণ্ঠ
পাখি(ইন্ডিয়ান রোলার): বৈজ্ঞানিক নাম
করাচিয়াস বেন্ঘালেন্সিস। বাংলায় যার নাম নীলকন্ঠ পাখি। এরা যখন ওড়ে তখন
এদের পাখার রঙ উজ্জল নিল,তামাটে আর সাদা মিলিয়ে অদ্ভূত সুন্দর লাগে। নীলকন্ঠ
পাখি সমগ্র ভারত,বাংলাদেশের গারো পাহাড়,হবিগঞ্জ,পার্বত্য
চট্টগ্রাম সহ সমগ্র দঃক্ষিণ এশিয়াতে দেখা যায়। পোকা,কীটপতঙ্গ,ব্যাঙ,সাপের বাচ্চা,টিকটিকি,গিরগিটি ইত্যাদি
এদের খাদ্য।
প্রাচীন প্রথা অনুসারে মা দূর্গা যেদিন বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাস রওনা হন,সেদিন আগে
থাকতেই নীলকন্ঠ ছেড়ে সুখবর পৌছে দেওয়া হয় শিব ঠাকুরের কাছে।
হটটিটি (রেড-ওয়াটেল্ড ল্যাপুইং): বৈজ্ঞানিক নাম ভানেল্লুস ইন্দিকাস। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ডাকের কারণে নাম হয়েছে হটটিটি। ইংরেজিতে এই
ডাকের অনুকরণে এর নাম রাখা হয়েছে ডিড-হি-ডু ইট পাখি। পাখিটি বাংলাদেশ,ভারত ছাড়াও
দক্ষিণ, পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন
দেশে দেখা যায়। জলাধারের আশেপাশে জোড়ায় জোড়ায় অথবা ছোট দলে এদের প্রায়ই চরে
বেড়াতে দেখা যায়। অবশ্য শীতকালে এরা বিশাল দল গঠন করে ঘুরে বেড়ায়। সারা
পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত,প্রায় ৫২ লক্ষ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার
এলাকা জুড়ে এদের আবাস। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে
ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
ঝুঁটিত্তয়ালা
সর্প ঈগল (ক্রেস্তেড সারপেন্ট ঈগল): বৈজ্ঞানিক নাম স্পিলোর্নিস চীলা। ভারতবর্ষ সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে
এদের বাসস্থান। এদের চোখের নজর খুব তীক্ষ্ণ। অনেক দূর থেকে ইঁদুর বা সাপ সহজেই
দেখে শিকার করতে পটু।
দেশি শুমচা(ইন্ডিয়ান পিট্টা): বৈজ্ঞানিক নাম পিত্ত
ব্রাচ্যুরা। ভারতীয় পিট্টা নওরঙ,নীল পাখি, বন সুন্দরী,সাদা হালতি নামেও পরিচিত। এক ধরণের ছোট
পাখি। ‘পিট্টা’ তেলেগু শব্দ,যার অর্থ ছোট পাখি। এরা বর্ণিল পাখি।
****************************
![]() |
ছবি ও লেখা-দেবাঙ্কর দত্ত
|
[পরিচিতি- কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ও কর্পোরেট এম বি এ নিয়ে শিক্ষা গ্রহণ। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিতে (ওরাকল এপ্লিকেশন
কনসালটেন্ট) কর্মরত। এত সবের মাঝেও সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পড়েন ঘুরতে। ফটোগ্রাফির প্রতি
অদম্য আকর্ষণ ও তার অন্যতম কারণ।
তাই বিভিন্ন জায়গার খোঁজ খবরও সব সময় রাখার চেষ্টা করেন।]
0 comments: