পিঠে ও পায়েস। ছবি-গুগল |
পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি
বাঙালি সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ উৎসবের দিন। পশ্চিমবঙ্গে মকরসংক্রান্তি ‘পৌষসংক্রান্তি’ নামে পরিচিত। ‘মকরসংক্রান্তি’ শব্দটি দিয়ে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশকে বোঝানো হয়ে থাকে।
ভারতীয় জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী 'সংক্রান্তি' একটি সংস্কৃত শব্দ, এর দ্বারা সূর্যের এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করাকে
বোঝানো হয়ে থাকে। ১২টি রাশি অনুযায়ী এ রকম সর্বমোট ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মকর
সংক্রান্তি বা পৌষসংক্রান্তি-তে মূলত নতুন ফসলের উৎসব ‘পৌষ পার্বণ’ উদযাপিত হয়। মকরসংক্রান্তি নতুন ফসলের উৎসব ছাড়াও ভারতীয়
সংস্কৃতিতে ‘উত্তরায়ণের
সূচনা’ হিসেবে পরিচিত। একে অশুভ সময়ের শেষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, পঞ্জিকা মতে, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়। এই দিনে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার
অন্তর্গত সাগর দ্বীপে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে
পুণ্যস্নান ও বিরাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সহস্রাধিক পুণ্যার্থী ও অন্যান্য রাজ্য
থেকে আগত দর্শনার্থীদের সমাগম হয় এই মেলায়।
আদি বাংলাদেশের ঢাকায়
পৌষসংক্রান্তি ‘সাকরাইন’ নামে পরিচিত। ভারতবর্ষের মতো একটি উষ্ণ অঞ্চলে ভ্রমণের জন্য
সবচেয়ে আরামপ্রদ সময় শীতকাল। বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,বিশেষ করে বাউল গানের আসর বসে। নতুন ধান,খেজুরের গুড় এবং পাটালি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী
পিঠা তৈরি করা হয়,যার জন্য
প্রয়োজন হয় চালের গুঁড়ো,নারকোল,দুধ আর খেজুরের গুড়।
গঙ্গাসাগর মেলা। ছবি গুগল |
ভারতের উত্তর এবং পশ্চিম
প্রদেশগুলোতে উৎসবটি প্রবল আগ্রহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে সংক্রান্তি দিবস হিসেবে পালিত
হয়। প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতেও এই দিনের তাৎপর্য সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। তাই
সামাজিক এবং ভৌগোলিক গুরুত্ব ছাড়াও এই দিনটি ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব বহন
করে।
কিছু আঞ্চলিক পরিবর্তন সাপেক্ষে
সংক্রান্তি উৎসবটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্রই উদযাপিত হয়। অন্যান্য দেশেও এই দিনটি
উদযাপিত হয়। তবে তা একটু ভিন্ন নামে এবং ভিন্ন উপায়ে। যেমন-নেপালে এটা পরিচিত
মাঘী নামে,থাইল্যান্ডে সংক্রান,লাওসে পি মা লাও,মিয়ানমারে থিং ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান নামে।
পশ্চিম ভারতীয় প্রদেশ গুজরাটে
উৎসবটি আরও অনেক বড় করে উদযাপিত হয়। মানুষ সূর্য দেবতার কাছে তাদের হাজারো ইচ্ছা
বা আকুতিকে সুন্দর সুন্দর ঘুড়ির মাধ্যমে প্রকাশ করে। এটা আসলে তাদের প্রিয়
দেবতার কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি রূপক হিসেবে কাজ করে। গ্রামগঞ্জে এবং উপকূলীয়
অঞ্চলে অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। মকরসংক্রান্তি
সম্মান,অভিলাষ এবং জ্ঞানের দেবী সরস্বতীকে সম্মান প্রদানের
মাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। যেহেতু উৎসবটি শীতের মাঝামাঝি সময়ে উদযাপিত হয়,সেহেতু এই উৎসবে এমন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়,যা শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং বেশ শক্তি জোগায়। গুড় দিয়ে তৈরি
তিলের লাড্ডু এই উৎসবের অন্যতম উপাদেয় খাবার। মহারাষ্ট্রে একে বলা হয় ‘তিলগুল’। কর্ণাটকে একে বলা হয় ‘ইল্লু বিল্লা’। অন্য
কিছু প্রদেশে গবাদিপশুকে নানা রঙে সজ্জিত করা হয় এবং আগুনের ওপর দিয়ে ঝাঁপ
দেওয়ানো হয়।
ঢাকায় ঘুড়ি উৎসব। ছবি গুগল |
পৌষ সংক্রান্তির দিন বাঙালিরা
সারা দিনব্যাপী ঘুড়ি ওড়ায়। এইদিন ঘুড়ি উড়ানোর জন্য তারা আগে থেকে ঘুড়ি বানিয়ে
এবং সুতায় মাঞ্জা দিয়ে প্রস্তুতি নেয়। ঘুড়ি উৎসব বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। মুঘল আমল থেকে
এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এই উৎসবে প্রচুর লোক সমাগম ঘটে। আদি ঢাকার অধিবাসীদের
কাছে এটি অত্যন্ত উৎসবমুখর দিন যা সাধারণত শীতকালে পালিত হয়।
0 comments: