নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড নামটা
শুনলেই চোখের সামনে কি ভেসে উঠে ? উইণ্ডমিল, টিউলিপ ফুল,
ডাচদের নিজস্ব স্থাপত্যে তৈরি তাদের বাড়িঘর,
রাস্তার পাস দিয়ে বয়ে চলা ক্যানাল, হল্যান্ড ফুটবল টিমের সেই উজ্জ্বল কমলা রং আরও না জানি কত
কি? পড়াশুনা করার সুবাদে নেদারল্যাণ্ডসেবেশ
কিছু দিন থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। যেমন সুন্দর দেশ, তেমনি সুন্দর তার মানুষগুলি।স্মৃতি হাতরে,
এই ছোট্ট সুন্দর দেশটার টুকরো কিছু মুহূর্ত শেয়ার করলাম
আপনাদের সাথে।
প্রথমেই আসি উইণ্ডমিলের
কথায়।নেদারল্যান্ডসের প্রায় সব কটি শহরেই দু-একটা পুরনো ঐতিহ্যশালী উইণ্ডমিলএখনও
দেখা যায়। কিন্তু কিণ্ডারডিজকে গিয়ে “থ” হয়ে গেছিলাম। এই উনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে ১৭৪০ সালের
তৈরি ১৯টি উইণ্ডমিল দেখা যায় এবং দারুণ ভাবে সংরক্ষিত। মিউজিয়াম সমেত একটা
উইণ্ডমিলের ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগও পেয়েছিলাম। ২৫০ বছর আগেকার উইণ্ডমিলের
কার্যপ্রণালী ও তার ভিতরে মানুষের বসবাসের ইতিহাস সুন্দর করে তুলে ধরা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসে কি দেখব কোথায় যাব ভাবার আগেই উত্তর হাজির। কেন অ্যমস্টারড্যাম? অ্যমস্টারড্যামের
মিউজিয়াম, রাজ প্রসাদের পাশাপাশি ডাচ স্থাপত্য মুগ্ধ করে।শহরের বুক চিরে বেরিয়েছে অসংখ্য
খাল বা ক্যানাল। আর এই খালগুলির ওপর প্রিয় ১৫০০টির ও বেশি ব্রিজ দেখা যায় ।কি
সুন্দর ভাবে একটা শহর তার ইতিহাস ও স্থাপত্যকে সংরক্ষণ করে রেখেছে, যা সত্যিই মুগ্ধ করে।
বোটে করে এই খালগুলিতে ঘুরে পুরো অ্যমস্টারড্যাম দেখা টুরিস্টদের মধ্যে খুবই
জনপ্রিয়।কিন্ত আমি ঘুরেছিলাম একটু অন্য রকম ভাবে। একটা সাইকেল ভাঁড়া নিয়ে সারাদিন
নিজের মত করে অ্যমস্টারড্যাম দর্শন ।
বার বার যখন নেদারল্যান্ডসের
খালের কথা বলছি, একটা খালের ছবি
না দিলেই নয়। তবে আমাদের দেশের খালের সাথে গুলিয়ে ফেললে আবার ভুল করা হবে। ডাচ
জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত এই খালগুলি। পরিবহন ব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ। শুধু
তাই নয়, নেদারল্যাণ্ডসেরশহরগুলির
সৌন্দর্যে অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে এই খালগুলি।শিতের সময় “ক্যানাল রেস্টুরেন্টে” বসে এক কাপ গরম কফিতে চুমুক! আহহ ! ভেবেই মন জুড়িয়ে গেল!
ডাচদের সাথে টিউলিপ ফুলের আত্মিক সম্পর্ক আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু প্রতিটি
অনুষ্ঠানই টিউলিপ উপস্থিত। হল্যান্ডে টিউলিপের বাগান দেখতে গেছিলাম
কিউকেনহফে।কিউকেনহফ কে “ইউরোপের বাগান” বলা হয়।কারণ ৩২হেক্টর
জায়গা জুড়ে এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বাগান।এতটাই বড় যে সারাদিনে ঘুরে শেষ করা
সম্ভব নয়। কিউকেনহফ পৃথিবী বুকে যেন এক টুকরো স্বর্গ।চারিপাশে টিউলিপ, ড্যাফোডিল, অর্কিড আরও নাম না জানা
কত বাহারি ফুল রং-এর বন্যা বয়েই দিচ্ছে। শুধু মনে রাখতে হবে এপ্রিল মে হচ্ছে
টিউলিপ ফুলের সময়।
দুধ ও চিসের দেশ হল্যান্ড। ডাচদেরচিসের প্রতি ভালোবাসা তো বিশ্ব জুড়ে । একজন
ডাচ প্রায় ১৪.৩ কেজি চিস খায় বছরে।বাজারে গেলেই চিসের দোকানে চোখ যাবেই । এত রকম
স্বাদের,সাইজের আর রং-এর চিস যে হতে পারে তা না দেখলে বিশ্বাস হত না। আর হ্যাঁ, কেনার আগে যত খুশি চেখে
দেখবারও সুযোগ আছে।
আরও একটা বিষয়ে যা আমাকে অবাক করেছিল, তা হল ডাচদের সাইকেলের প্রতি ভালবাসা। কথায় আছে ডাচ
রামায়ের পেটে থাকা অবস্থাতেই সাইকেল চালানো শিখে ফেলে।২ থাকে ৮০ বছর বয়সী সবাই
সাইকেল চালায়। এমন কি নেদারল্যান্ডসের মহারানী মাঝেমধ্যে সাইকেল চালিয়ে
পার্লামেন্টে আসেন ! এই দূষণ হীন যানটির জন্য রাস্তায় আলাদা ট্রাফিক, সিগন্যাল ব্যবস্থা, বিশেষ প্যাকিং ব্যবস্থা
সবই করা আছে।নেদারল্যান্ডসে গিয়ে আমিও সাইকেলের প্রেমে পরে গেছিলাম।
রটা-ড্যাম নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ও ইউরোপের সবচেয়ে বড় সমুদ্র
বন্দর। আধুনিক স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন হল রটা-ড্যাম।
পরিশেষে নেদারল্যান্ডসের যে
শহরটাই আমি ছিলাম তার কথাই আসি। বিখ্যাত ডাচ শিল্পী জোহানেস ভারমারের শহর “ডেল্ফ”। ছবির মত সুন্দর শহর ডেল্ফ। তাই পরিশেষে তার একটা ছবি না দিয়ে পারলাম না।
“ মন বারবার, ফিরে যেতে চায়।
সেই একই রূপে,
আবারও যেন তোমায় ফিরে পায়।“
প্রিয় হল্যান্ড
****************************
![]() |
লেখা ও ছবিঃ জীবক চ্যাটার্জি
|
[লেখক পরিচিতি- বর্তমানে একটি
অন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কর্মরত। দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান তার নেশা। ]
sundor lekha aar onek ojana jinis jana gelo. Amader dese ei sobe wind mill suru hoyeche Rajsthan er onek paharer mathay ei windmill cholche. Biker( odese saikel ke bike bole) byapar te amra kobe copy korte parbo. Ei rokom aro lekha apnar kolom theke pa bo asa kori.
ReplyDelete