গুরুদংমার এই যাত্রা পথে কোনও গাছপালা নেই,তাই অক্সিজেন
লেভেল কমে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। দিগন্ত বিস্তৃত উঁচুনিচু মাঠ,তার ওপারে শুধু বরফ ঢাকা চূড়া গুলো দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে
আমরা অনেক উপরে উঠে এসেছি। এক জায়গায় দেখি কিছু ফ্ল্যাগ আর কয়েকজন লোক দাড়িয়ে, একটা গাড়িও ছিলও,আমরা গিয়ে তার
পাশেই দাঁড়ালাম। সামনেই গুরুদংমার লেক,
যেন বরফ দিয়ে
মোড়া কিন্তু তাকানো যাচ্ছিল না কারণ সকাল সারে ৭ টায় সূর্যের আলো পড়ে চোখ ধাঁধিয়ে
যাচ্ছিল। এক সাইডে একটু জল আছে,সেখান দিয়ে
তিস্তার জল বেরোচ্ছে,এই নিয়ে আমার এই
বয়সে এসেও দুটো নামকরা নদীর উৎস দেখা হয়ে গেল। গোমূখে গঙ্গা আর এখানে তিস্তা।
কিন্তু কম অক্সিজেন আমাদের বেশ দুর্বল করে দেওয়াতেই আমরা গাড়ি থেকে নেমে বেশি
হাঁটাহাঁটি করতে পারিনি ।কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েই গাড়িতে উঠে পরেছি (ছবি ১৬ থেকে
২০)।ছবি তোলার ক্ষমতাই যেন চলে গেছিল। শুধু আমার নয়,অন্যদেরও একই
অবস্থা। কারণ পরে বুঝেছি,বলছি পরে। দুপুর
বারোটা নাগাদ লাচেন ফিরে এলাম। এরপর আমরা যুম্থাং যাব বলে লেচুং-ও গেছিলাম,কিন্তু শরীর খারাপ হওয়ার জন্য আর যেতে পারিনি,পরের দিন গ্যাংটক ফিরে গেলাম । কিন্তু আমাদের গ্যাংটক দেখা
হয়নি।
আসলে আমাদের প্ল্যানিং টা একটু ভুল ছিল,আমরা কথাও
নিজেদের শরীরকে আবহাওয়ার সঙ্গে সমন্বয় করার সময় দেয়নি। এটার খুবই দরকার।
গুরুদংমার লেকে এই যে শরীর খারাপ হয়েছিল,সেটা হত না যদি
আমরা প্রতি স্টপে একটা করে অতিরিক্ত রাত কাটাতাম। ১০ ঘণ্টা জার্নি করে,অল্প খেয়ে,রাত ২ টোয়
বেরিয়ে,জল ছাড়া আরও ১০ ঘণ্টা কাটালে যে কোনও
লোকের শরীর খারাপ হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কাজেই গুরুদংমার লেক দেখতে গেলে এই ভাবেই
প্ল্যান করাটা আমার মনে হয় ভালো হবে - যাওয়ার পথে গ্যাংটকে অথবা লাচেনে ২/৩ রাত,আর ফেরার পথে গ্যাংটকে এসে অন্তত ১ রাত কাটিয়ে নিলে শরীরের
উপর চাপ কম পরবে। যাত্রার সময়ে যেখানেই যাও ভালো স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স অথবা
ড্রাই-ফুড যেন সাথে থাকে,কারণ রাস্তায়
সবসময় মনোমত খাবার পাওয়া যায়না। আর অবশ্যই প্রত্যেকের জন্য একটা করে জলের বোতল
সাথে রাখতে হবে।
সমাপ্ত
**************
ছবি ও লেখা -অভিজীৎ সরকার
|
[পরিচিতি-ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অবসরপ্রাপ্ত চার্টার্ড একাউন্টেন্ট।বয়স
৬৭,ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন ছবি তুলতেও,
চাকরী করা কালীন
ফটোগ্রাফি শেখার সময়-সুজগ হয়নি, যে দৃশ্য তার
চোখে ভাল লাগে সেই ছবিই তোলেন। সালটা সম্ভবত ১৯৫৭-৫৮ হবে, হটাৎই কিনে ফেলেন একটা জার্মানী মেড আগফা ক্যামেরা, সুরু হয় ফটোগ্রাফির যাত্রা। যদিও তিনি বলেন- “আমার ফটোগ্রাফির
জ্ঞান খুবই কম, ইয়ং জেনারেশনদের কাছ থেকে অনেক কিছু
শিখছি”। কিন্তু তার
ছবি ও গল্পে একটা অসাধারণ আকর্ষণ আছে,
যার কোন তুলনা
হয় না।]
No comments:
Post a Comment