শিরোনাম

আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসঃ একটি প্রবন্ধ

সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত অটিজম সচেতনতা দিবস। ২০০৭ সাল থেকে এই দিবস পালন করা হচ্ছে । যখনই কোনো বাবা-মা জানতে পারেন তাদের শিশুটি অটিস্টিক তখনই এক ভয়াবহ রকম আতঙ্ক কাজ করে তাদের মধ্যে। কেননা অটিজম আক্রান্ত শিশুটি মানুষ হিসেবে অসম্পূর্ণ। সমস্যাটির নাম অটিজম। আর এই সমস্যায় ভুক্তভোগী শিশুটিকে বলা হয় অটিস্টিক শিশু বা স্পেশাল চাইল্ড। অটিজম শিশুর মানসিক বিকাশের একটি অন্তরায়। বর্তমানে এই সমস্যা সমগ্র বিশ্বে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।প্রতি ১৫০ জন শিশুর মধ্যে ১ জন শিশু হতে পারে অটিস্টিক। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বে শহরাঞ্চলের স্বচ্ছল পরিবারগুলোতে অটিজমের প্রাদুর্ভাব বেশি। গ্রামাঞ্চলে ও অস্বচ্ছল পরিবারে অটিজমের প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে কম।
অটিজম আসলে কি?
অটিজম হচ্ছে মস্তিষ্কের বিন্যাসগত সমস্যা । অটিজম শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকে, যার ফলে শিশু শুধুমাত্র নিজের মধ্যে আচ্ছন্ন থাকে, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে । শিশু যখন শুধু নিজের মধ্যে আচ্ছন্ন থাকে তখন তার অন্যদের সাথে যোগাযোগ, সামাজিকতা, কথা বলা, আচরণ ও শেখা বাধাপ্রাপ্ত হয়।
অটিস্টিক শিশু নির্ধারণ
অটিস্টিক শিশু নির্ধারণ করার জন্য কোনো মেডিকেল টেস্ট নেই। শিশুর আচার-আচরণ, তার বয়স অনুপাতে বুদ্ধির বিকাশ, কর্মদক্ষতা, ভাষাগত দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক যোগাযোগের ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই নির্ধারণ করা হয়ে থাকে শিশুটি অটিস্টিক। সাধারণত: জন্মের ২-৫ বছর বয়সের মধ্যে একটি শিশু অটিজমে আক্রান্ত কিনা তা নির্ণয় করা যায়।

অটিস্টিক শিশুর লক্ষণসমূহ
এরা সাধারণত একা একা থাকে ।
অন্যদের সাথে মিশতে, খেলতে এবং কথা বলতে চায় না ।
কথা বললেও অটিস্টিক শিশুরা অন্যের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে চায় না।
মানুষের প্রতি আগ্রহ কম প্রদর্শন করে।
কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক আচার আচরণের উন্নতি হলেও সামাজিক দায়িত্ব, ভাববিনিময় ও অপরের প্রতি সহানুভুতির সমস্যা রয়ে যায় ।
অটিস্টিক শিশুদের আদর-ভালবাসার প্রতি আকর্ষন কম । যেমনঃ তাকে কোলে নেওয়া বা আদর করা সে পছন্দ করে না। তবে অনেক অটিস্টিক শিশু তার প্রতি বাবা মার স্নেহ-মমতা বুঝে।
বন্ধু বান্ধবের সাথে খুব কম মিশে ।
অকারণে হাসে, কাঁদে বা ভয় পায় ।
প্রথাগত শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কম কিন্তু ছোট ছোট বস্তুর প্রতি আগ্রহ বেশি।
বিপদ সম্পর্কে অসচেতন।
যে কোন বিষয় কেউ কেউ অতিমাত্রায় সতর্ক আবার কেউ কেউ মোটেই সতর্ক নয়।
অনেক বেশি শব্দ অপছন্দ করে।

অটিজমের কারণ
শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে অটিজমের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে কিছু জানা যায় নি।তবে অটিজমের লক্ষণগুলো পর্যালোচনা করে কিছু কারণ সনাক্ত করা যায়, যথা-
মস্তিষ্কের কোনরূপ গঠনগত ত্রুটি।
মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বৈদ্যুতিক ক্রিয়া।
মস্তিষ্কের নিউরো-কেমিক্যলের অসামঞ্জস্যতা।
শিশুর জন্মপূর্ব বা জন্মের পরবর্তীকালের কোনরূপ সংক্রমণ ব্যাধি।
জিন অথবা ক্রোমোজোমগত অস্বাভাবিকতা
অন্তক্ষরা গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণে অসামঞ্জস্যতা।
অটিজমের চিকিৎসা পদ্ধতি
প্রথমেই বলেছি অটিজম শিশুর সম্পূর্ণ একটি মানসিক সমস্যা। তাই এর চিকিৎসা ধরনটাও মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতির ও সময়সাপেক্ষ। প্রায়শই অভিভাবকেরা শিশুর রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাদানে ভুল পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। সাধারণ মেডিকেল চিকিৎসা আর ওষুধ সেবনে অটিজম থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। অনেক সময় অভিভাবকেরা আধ্যাত্মিক চিকিৎসার শরণাপন্ন হয়ে থাকেন যা অত্যন্ত ভুল সিদ্ধান্ত।
যেহেতু এটি একটি মানসিক সমস্যা তাই অভিভাবকদের প্রয়োজন অটিস্টিক শিশুকে একজন মনস্তাত্ত্বিক গবেষক এবং মনোবিদের নিকট নিয়ে যাওয়া। সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা পেলে অটিস্টিক শিশু সুস্থ হবার সম্ভাবনাও শতভাগ। অটিস্টিক শিশু হয়তো আর সব সাধারণ শিশুর মতো সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক আচরণ করতে পারবে না। কিন্তু সাইকোথেরাপী বা স্পেশাল শিক্ষাদানের মাধ্যমে এইসব শিশুকে ৮০-৯০ ভাগ পর্যন্ত সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এর ফলে শিশুটি নিজের একান্ত ব্যক্তিগত কাজ থেকে শুরু করে পারিবারিক ও সামাজিক নানা কাজেও অংশগ্রহণ করতে পারে। আবার চিকিৎসা গ্রহণ করে সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে বিয়ে ও সংসার করাও সম্ভব অনেকের পক্ষে।

অটিজম নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
অটিজম নিয়ে মানুষের মাঝে কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা সত্যতা পাওয়া যায় নি। অনেকেই মনে করেন, অটিজম বংশগত রোগ। সম্পূর্ণভাবে সুস্থ-স্বাভাবিক বাবা-মায়ের ঘরেও অটিস্টিক শিশু জন্মগ্রহণ করে থাকে। পরিবারের বা বংশের কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত না হলেও একটি শিশু অটিস্টিক হতে পারে।
বাবা-মায়ের সঠিক পরিচর্যার অভাবে শিশু অটিস্টিক হয় এমন একটি প্রচলিত বিশ্বাস অনেকের মাঝেই রয়েছে। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, একান্নবর্তী পরিবার অথবা একমাত্র সন্তান হবার পরেও একটি শিশু অটিস্টিক শিশু হয়ে থাকে। অটিস্টিক শিশুকে অনেকে পাগল,বাবা-মায়ের অভিশাপ ইত্যাদি কুসংস্কারে সংজ্ঞায়িত করে থাকেন, যা সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন। এরূপ বিশ্বাসের ফলে অনেক সময় শিশুর ভুল চিকিৎসা করে থাকে। যা শিশুর জীবনের জন্যেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
কিছু কিছু শিশুর জন্ম ও স্বভাবগতভাবেই একটু বেশি অস্থির, চঞ্চল, রাগী ও জেদি প্রকৃতির হয়ে থাকে। এতে করে শিশুটি অটিস্টিক শিশু হতে পারে এমনটা ভেবে ভয় পাবারও কিছু নেই।
উল্লেখ্য, অটিজমের বেশ কয়েকটি লক্ষণ শিশুর মধ্যে প্রকাশ পেলেই দেরী না করে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। সঠিক মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অটিস্টিক শিশুদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সঠিক তত্ত্বাবধান ও শিক্ষাদান পদ্ধতি। সচেতনতা এবং সুচিকিৎসা নিশ্চিত করে একটি অটিস্টিক শিশুর স্বাভাবিক ও সুস্থ 

0 comments: