শিরোনাম

মহাভারতের লিপিকার

ছবি- গুগল 
ব্যাসদেব হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী মতানুসারে এক জন ঋষি ছিলেন। বশিষ্ঠের প্রপৌত্র,শক্তির পৌত্র,পরাশরের পুত্র শুকদেবের পিতা। ইনি পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারত,অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও উপপুরাণ,বেদান্তদর্শন,ভাগবত প্রভৃতির রচয়িতা এবং বেদের বিভাগকর্তা ঋষি। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী,মহাভারত-এর রচয়িতা ব্যাসদেব। অনেক গবেষক এই মহাকাব্যের ঐতিহাসিক বিকাশ ও রচনা কালীন স্তরগুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন। মহাভারতের মূলপাঠটি প্রাচীনতম অংশটি মোটামুটি ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ রচিত হয়। তার বর্তমান রূপটি পরিগ্রহ করে গুপ্তযুগের প্রথমাংশে বা খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে। মহাভারত কথাটির অর্থ হল ভরত বংশের মহান উপাখ্যান। গ্রন্থেই উল্লিখিত হয়েছে যে ভারত নামে ২৪,০০০ শ্লোকবিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্রতর আখ্যান থেকেই মহাভারত মহাকাব্যের কাহিনীটি বিস্তার লাভ করে।
মহাভারতে এক লক্ষ শ্লোক ও দীর্ঘ গদ্যাংশ রয়েছে। এই মহাকাব্যের শব্দসংখ্যা প্রায় আঠারো লক্ষ। মহাভারত মহাকাব্যটির আয়তন ইলিয়াড ও ওডিসি কাব্যদ্বয়ের সম্মিলিত আয়তনের দশগুণ এবং রামায়ণ-এর চারগুণ।
ছবি- গুগল 

ব্যাসদেব বেদকে শতশাখাযুক্ত চার ভাগে বিভক্ত করে বেদব্যাস নামে অভিহিত হয়েছেন। ব্যাসদেব অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও উপপুরাণ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। বেদান্তদর্শন রচনাও ব্যাসদেব অন্যতম কৃতিত্ব। বিষ্ণু অবতার ও কৃষ্ণ জীবনকথা নিয়ে রচিত ব্যাসদেবের অনবদ্য রচনা ভাগবত পুরাণে মোট বারোটি স্কন্দ বা সর্গ ও প্রায় ১৮,০০০ শ্লোকে রয়েছে। হিন্দু সমাজে সুপরিচিত বহু উপকথার উৎস ভাগবত পুরাণ।
যমুনানদীতে খেয়া নৌকার ভিতর পরাশর মুনি সত্যবতীর সাথে মিলিত হলে,সত্যবতী গর্ভবতী হন। পরে যমুনা'র একটি দ্বীপে ব্যাসদেব জন্ম গ্রহণ করেন। যমুনার দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন বলে নাম হয় দ্বৈপায়ন এবং গায়ের রঙ কালো ছিল বলে,পুরো নাম হয় কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। তাঁর মাথায় কপিল বর্ণের জটা ছিলচোখ ছিল উজ্জ্বল ও মুখে পিঙ্গল বর্ণের দাড়ি ছিল। তপস্যাবলে মহর্ষিত্ব প্রাপ্ত হয়ে বেদকে চার ভাগে ভাগ করেছিলেন। এই কারণে ইনি বেদব্যাস বা 'ব্যাস' নামে পরিচিত হন। জন্মের পরপরই মায়ের অনুমতি নিয়ে তপস্যার জন্য যাত্রা করেন ব্যাসদেব। তপস্যার স্থান ছিল বদরিকাশ্রম। এই কারণে ইনি বাদরায়ণ নামেও পরিচিত ছিলেন।
"যথাতে সংযোগ হয় বিয়োগ অবশ্য। শরীর অনিত্য জান মরণ অবশ্য।।"
মহাভারতের এরকম হাজারও শ্লোকের রচয়িতা ব্যাসদেব। মহাভারত হতে জানা যায় যে -ইনি মহাভারত লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্রহ্মার কাছে একজন লিপিকার নিয়োগের পরামর্শ গ্রহণ করতে গেলে- ব্রহ্মা গণেশকে নিয়োগ করতে বলেন। গণেশ এই শর্তে লিপিকার হতে সম্মত হলেন যে, লিপিবদ্ধ করার সময় ইনি ক্ষণমাত্রও থামবেন না। ব্যাস তাতে রাজী হয়ে অপর একটি শর্ত জুড়ে দিয়ে বললেন যে, গণেশ কোন বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ না বুঝে লিপিবদ্ধ করতে পারবেন না। এরপর গণেশ এই শর্তে রাজী হলে মহাভারত লিখা শুরু হয়। ব্যাসদেব তাঁর শ্লোক রচনার মাঝে মাঝে কিছু জটিল শ্লোক রচনা করেতন- গণেশ এই শ্লোকগুলির অর্থ বুঝে লিখতে যে সময় ব্যয় করতেন,সেই সময়ের মধ্যে ব্যাসদেব আরও অনেক শ্লোক বানিয়ে ফেলতেন।

মহাভারত মহাকাব্যটি গল্পের মধ্য গল্প শৈলীতে রচিত। এই শৈলী ভারতের অনেক ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষ রচনার বৈশিষ্ট্য। অর্জুনের প্রপৌত্র জনমেজয়ের নিকট এই কাহিনী পাঠ করে শোনান ব্যাসদেবের শিষ্য বৈশম্পায়ন। বহু বছর পরে,জনমেজয়ের নিকট বৈশম্পায়নের এই মহাভারত কথনের ঘটনাটি পেশাদার কথক উগ্রশ্রবা সৌতিকর্তৃক ঋষিদের একটি যজ্ঞ সমাবেশে কথিত হয়।

0 comments: