ছবি- গুগল |
সারা বছর যে সময়টার জন্য
অপেক্ষা করে থাকেন গকুল সেনশর্মা, সেই
পৌষ পার্বণটাও হুস হুস করে বেড়িয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে দিয়ে। আর এই পৌষ সংক্রান্তির
আসল যাকে নিয়ে মজা সেই পিঠে পায়েস টাই তো ভাগল বা! কারণ আর কি পেটে সইছেনা তাই।
কথায় বলে পেটে খেলে নাকি পিঠে সয়। সকাল থেকে বাথরুম আর ঘর করতে করতে কথাটা এখন
অত্যাচারে এসে ঠেকেছে। তার ওপর ফেসবুকে
সবাই যে রেটে পিঠের ছবি লাগাচ্ছে তাতে কেমন জেন একটা হতাস ভাব ছেঁকে ধরেছে গকুল
বাবুকে। নিজের নামটাও মনে করতে ইচ্ছে করছেনা। সেটাও তার নিজের প্রিয় পিঠের নামের
একটা কিনা। নামটা রেখে ছিলেন দাদামশাই। তিনি নিজে বড় ভাল বাসতেন পিঠে পায়েস খেতে।
আর গকুল পিঠে ছিল তার মধ্যে সব থেকে প্রিয়। আজকের দিনে দাদামশাই বাড়ির কাউকে
হেঁসেলে ঢুকতেই দিতেন না। নিজেই সব করতেন নিজের হাতে করে। দাদামশাই লাউ এবং গাজর
দিয়ে দারুণ এক পায়েস রান্না করতেন। তার পর বাড়ি সুদ্ধ সবাই সেদিন পিঠে দিয়েই ভজন
পর্ব শেষ করত। সেই পিঠে পায়েসের স্বাদ আর গন্ধ এখনও যেন সমস্ত ইন্দ্রিয়ে মাখা মাখি
হয়ে আছে। রান্নার গুনটি না পেলেও খাওয়ার গুনটা সোলো আনা বাগে এনেছেন গকুল বাবু।
নিজের বাড়িতেও প্রতি বছর পিঠে হয়। ছেলের বউ ফিগার মেনটেন করার জন্য মিষ্টি খায়না।
সে না খাক এই সব জিনিশে ভাগীদার যত কম হয় তত ভাল। কিন্তু এই বার আসল খাইয়ে লোকের
অসুখ বলে পিঠেই নাকি হবে না। উফ ভাবা যায়। আগের দিন হলে এই সব অন্যায় কাজ করার
সাহস পেত কেউ। সামান্য প্রতিবাদ করার চেষ্টাও করেছিলেন কিন্তু সেটি বউ আর ছেলের
দপটে উড়ে গেছে। কেবল বউমাই এই বিষয়ে একটু সমর্থন করেছিল। বলেছিল, আজ বাপি নাই বা খেতে পারুক কাল তো আর পেট খারাপ থাকবেনা। তার উত্তরে
শাশুড়ির বলেছিল তুমিই না হয় তাহলে পিঠে কর মা! সেই শুনে বেচারি আর কিছু বলার
রিস্কটাই নেয়নি। জাই হোক এখন আর ভেবে কি হবে...... আবার সেই একটি বছরের জন্য
অপেক্ষা করতে হবে।
চোখ বুজে আধ সোয়া হয়ে দুঃখের
কথা ভাবছিলেন। রাত ৭টা বেজে গেল আজকের দিনটাই শেষ, আর সাথে সাথে পিঠে খাওয়ার আশাও। হটাত করে নাকের কাছে একটা গন্ধ পেলেন।
নিশ্চয় পাসের বাড়িতে পায়েস বা পিঠে হচ্ছে। কিন্তু গন্ধটা এত কাছ থেকে আসছে যে!!
চোখ মেলেই দেখলেন বউমা দাঁড়িয়ে হাতে পায়েসের বাটি। হেসে বলল – বাবা
আজ অফিসে আমার এক কলিগ সবার জন্য লাউ ও গাজরের পায়েস এনেছিল। প্রতিবারই আনে।
অন্যবার আমি খাইনা কিন্তু এই বার আমার ভাগেরটা আমি আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। মায়ের
কাছে শুনলাম দুপুরের পর থেকে আপনার আর তেমন কোন পেটের অসুবিধা হয়নি। তাই এখন খেলে
কিচ্ছু হবেনা। আমি ডাক্তার কাকুকেও জিজ্ঞেস করেছি। এই টুকু পায়েসে অসুবিধা হবেনা।
আনন্দের চোটে প্রায় অভিভূত হয়ে গেলেন গকুল বাবু। হাতটা বাড়িয়ে বললেন দাও মা!
উপকরণ- সময়-
৪৫ মিনিট
লাউ-গ্রেট করা ২ কাপ
গাজর-গ্রেট করা ১ কাপ
নারকেল-কোরানো ১ কাপ
দুধ-২ লিটার
কনডেন্সড দুধ-১ কৌটা
এলাচ গুঁড়ো-আধ চা চামচ
ঘি-৩ টেবিল চামচ
পেস্তা বাদাম কিসমিস সাজানোর
জন্য- পরিমাণমত।
প্রণালী- লাউ ও গাজর ফুটন্ত জলেতে আধ সেদ্ধ করতে হবে।
তারপর কাপড়ে চিপে শুকিয়ে নিতে হবে। ঘিয়ে লাউ ও গাজর হাল্কা ভেজে নিতে হবে। এবার ২
লিটার দুধ ঘন করে নিয়ে লাউ ও গাজর নারিকেল দিয়ে ভাল করে নেড়ে নেড়ে ঘন হয়ে এলে এলাচ
গুড়ো দিয়ে নামাতে হবে। পেস্তা বাদাম কিসমিস দিয়ে সাজিয়ে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন
করতে হবে।
********************
ছবি ও লেখাঃ প্রিয়াংকা দাশ |
[লেখক পরিচিতি: বাংলা ও মাস কমিউনিকেশন নিয়ে মাস্টার্স। বর্তমানে
স্ব-নিযুক্ত কাজের সাথে যুক্ত। এছাড়াও লেখা-লেখির নেশা ছোট থেকেই। আর ভালবাসেন
নিত্য নতুন রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে।]
No comments:
Post a Comment