ছবি-গুগল |
বাঁকুড়ার অন্তর্গত একচিলতে ঘোরার জায়গা হল বেলডাঙা। একচিলতে হলেও তার
সৌন্দর্য কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার মতন নয়। থাকার জায়গা সোনামুখী থেকে লাল মাটির পথ
পার হতেনা হতেই গন্তব্য স্থল বেলডাঙা হাজির। জঙ্গলের গা ঘেঁসে ছোট্ট ড্যাম। আর
সেখানেই একটা জলাশয় কেন্দ্র করে বেলডাঙা প্রকৃতি উদ্যান। সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ
দলমা পাহাড় থেকে খাবার জলের খোঁজে কখনও সখনও হাতির পাল নেমে আসে বেলডাঙার জঙ্গলে।
এই জলাশয়ে তেই তারা মনের সুখে কাটায় দুদণ্ড।
হস্তি দর্শন না ঘটলেও বছরের অন্য সময়ে কেবল মাত্র যারা ছুটি কাটানোর মুডে
আসতে চান তাদের জন্যও আছে অন্য ব্যবস্থা। কচিকাঁচাদের নিয়ে অথাবা সঙ্গীর হাত ধরে
প্যাডেল বোটে জল বিহার করাই যেতে পারে।পাতার ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে এসে পড়া আলো যখন গভীর
অরণ্যের সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা তৈরি করবে,তখন চোখে পড়তেও পারে ময়ূর অথবা হরিণ।
দুপাশে অরণ্য মোড়া কালো পিচ রাস্তা ফুড়ে ছুটে যায় নেউল,সাদা
খরগোশ। তারপর যখন সূর্যের আলো পড়তে থাকবে তখন হাঁটা পথে বা গাড়িতে বাংলোয় ফেরা।
তারপর রাত গাঢ় হবার সাথে সাথে শোনা যায় হায়না ও শেয়ালের ডাক। নিশুতি রাতের বনের
গাছগাছালিতে পাতার খসখস শব্দ, মালুম হবে আরও কত বন্য
জন্তুর উপস্থিতি।
ছবি-গুগল |
বিস্তৃত শাল জঙ্গলকে ঘিরে কত না গাছের সমারহ- বট,অশ্বত্থ,আম,জাম,শিমুল। পায়ের
কাছে লুটিয়ে থাকা লজ্জাবতী লতা। ছুটির দিন গুলিতে সবুজ প্রান্তে এমন ভ্রমণ ভাল না
লেগে যায়না। আর যদি বেড়ানোর দিন গুলির মধ্যে থাকে পূর্ণিমার তা হলে তো সোনায়
সোহাগা। মাথার ওপরে দিগন্ত জুড়ে আলো ঠিকরে
দেওয়া চাঁদের বাহার অনেক দিন থেকে যাবে মনের পটে। বাংলোর বারান্দায় বসে হাতে এক
কাপ কফি নিয়ে সেই রূপ আস্বাদন করা যাবে অনেক রাত পর্যন্ত।
কোথায় কি?
সোনামুখী শহরের ভেতরে পঁচিশ চূড়াযুক্ত টেরাকোটা অলংকৃত শ্রীধর মন্দির (স্থাপিত
১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে)। ১৮৩৫-এ তৈরি গিরি গোবর্ধন মন্দিরটিও দর্শনীয়। জৈন তীর্থঙ্করের
মূর্তি সমন্বিত স্বর্ণমুখী দেবীর মন্দির। যার নাম থেকেই সোনামুখী শহরের নামকরণ। কোম্পানি
আমলের নীলকুঠির ধ্বংস চিহ্ন। রামনবমীতে এখানে মনোহর দাসের মেলা বসে। জমে ওঠে বাউল
আখড়া। এ ছাড়া বিখ্যাত কালী ও কার্তিক পুজোতে ঢল নামে মানুষের।
কি ভাবে যাবেন?
– হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে বর্ধমান। সেখান থেকে বাকুড়ার বাস ধরে সোনামুখী।
– সরাসরি সোনামুখীর বাসও পাওয়া যায়। জনপ্রতি হাওড়া থেকে ভাড়া পড়বে ৪০
টাকা।
কোথায় থাকবেন?
– সোনামুখী রেঞ্জের বন বাংলো
ডি এফ ও,
বাকুড়া (উত্তর)
ফোন: ০৩২৪২-২৫০৭৫৮
৩ জনের দৈনিক ভাড়া ৫০০ টাকা। এক জন চৌকিদার আছেন। তাকে খরচাপাতি দিলে
রান্নার ব্যবস্থা করে দেন।
– সোনামুখী পুর আবাসিক ভবন
ম্যানেজার, সোনামুখী,
পুর আবাসিক ভবন,
ফোন: ০৩২৪৪-২৭৫৯৬০
সেখানে ডবল বেড রয়েছে ৮টি। ভাড়া ঘর প্রতি ২০০ টাকা। ডর্মিটরিতে রয়েছে ১০টি
বেড। বেডপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা।
খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে সামনেই খাওয়ার হোটেল। দুবেলা সেখানে খেয়ে হোটেলে
ঢুকতে হবে।
এমন নৈশব্দ ভ্রমণে সোনামুখী বন বাংলো উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু একান্তে থাকার
ব্যবস্থা না হলে সোনামুখী পুর আবাসিক ভবনই ভরসা। তিন দিনের ট্যুরে জনপ্রতি
আনুমানিক খরচ ন্যূনতম ১০০০ টাকার ও কম। অতএব,বেরিয়ে পড়া যায় কলকাতার খুব কাছে বেল ডাঙ্গার নিভৃত জঙ্গলে।
No comments:
Post a Comment