বঙ্গ বাঙালি সংস্কৃতি বলতেই প্রাচীন
লোক গীতি, নজরুল, অতুল
প্রসাদ ইত্যাদি প্রভৃতি এবং অতি অবশ্যই রবীন্দ্র চর্চা। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও অজান্তে কখন যেন বর্তমান বাংলা আধুনিক
জীবন মুখি গান, বাংলা ব্যান্ড এর গান আজ আমাদের কালচারের সঙ্গে জুরে গেছে। রক্ষণশীল বাঙালিদের অনেকেই এই কথা শুনে হয়ত অসন্তুষ্ট হতে
পারেন। কিন্তু ৭০-এর দশকের বাঙালি আর ৯০-এর শুরুর কথা যাদের মনে
আছে তারা হয়ত এক মত হবেন “মহিনের ঘোড়াগুলি” এবং পরবর্তী কালে বাংলা ব্যান্ড “অভিলাষা”র গান গুলির ক্ষেত্রে।
বাংলা ব্যান্ড ‘অভিলাষা’ নামটা সুনে চেনা চেনা লাগছে কি? না আমি ৯০-এর প্রজন্মের কথা বলছিনা। আমি বলছি এখনকার
প্রজন্মের কথা। যারা ‘অভিলাষা’র গান শুনে থাকলেও বাংলা ব্যান্ড অভিলাষার সম্পর্কে কোন খবর রাখে না। এখন কার ই দুনিয়ার বাসিন্দাদের দোষ দেওয়াও যায়না কারণ গুগল
বা উইকিপিডিয়া তে ‘অভিলাষা’র কোন ইনফোই যে নেই। ফেসবুকে একটি পেজ থাকলেও তা গুটি ছয় মানুষরা ছাড়া কেউই জানেননা। বাংলা গানের দল থেকে বাংলা ব্যান্ড এ উত্তীর্ণ হওয়ার পথে
প্রথম কাজটাই করেছিল ‘অভিলাষা’। সিএলটি-র এক অনুষ্ঠানে
‘বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীত’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করে, নব্বইয়ের দশকের সব থকে
জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘অভিলাষা’। ১৯৯১ এ কুট্টি মজুমদারের হাত ধরে গল্ফগ্রিন এলাকায় জন্ম নেওয়া
ব্যান্ড ‘অভিলাষা’। কংক্রিটের জঙ্গলে
রিলিফ খোঁজার তাগিদে দলের সবার ইচ্ছায় গড়ে ওঠে অভিলাষা। তারপর তাঁর গলায় এক এক করে উঠে এসেছে ‘অধর্ম’, ‘তুমি নেই’, ‘আমার আমি’, ‘হারায়ে’ সব মন ভাল করে দেওয়ার মত গান। ৯৭’এ অভিলাষা প্রথম
অ্যালবাম রিলিজ করে।
গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ও সুর
দেওয়া ‘দরিয়ায় আইল তুফান’ গানটি কুট্টি মজুমদারের গলায় অভিলাষার মাথায় জুরে দেয় অন্য পালক। না কুট্টি মজুমদার বা তাঁর ‘অভিলাষা’ ইতিহাস রচনা করেনি। আদ্যপান্ত সোজা
সাপটা মানুষটি যিনি কিনা ছিলেন বাংলা ব্যান্ডের প্রথম প্রজন্মের অন্যতম এক সৈনিক সবার
অজান্তেই চলে গেলেন। শেষের দিকে ‘অভিলাষা’ ছিল কিন্তু টীকে থাকা বলতে যা বোঝায় তা হয়ত নয়। বহু মনমালিন্য ও বিভিন্ন কারণে বারবার দল ভেঙ্গেছে আবার গড়েছে। একটি অনুষ্ঠানে কুট্টি মজুমদার বলেছিলেন – আমি এক মাত্র অভিলাষার জীবিত মেম্বার। শেষ দিন পর্যন্ত কুট্টি মজুমদার স্বপ্ন দেখতেন আবার গানের
জগতে “অভিলাষা”র প্রাণ প্রতিষ্ঠা করারা। সেই জীবিত সদস্যই
আজ সবার সব জল্পনা-কল্পনার বাইরে।
আজ সবার প্রিয় কুট্টি দার
প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানিয়ে কলকাতার গলফ গ্রিন সেন্ট্রাল পার্কে অনুষ্ঠিত
হল এক গানের অনুষ্ঠান “হাওয়ায় মেলেছি পাখনা”। ছিলেন অনিন্দ্য বোস, অভিজিত বর্মণ(পটা), রুপম ইসলাম, সিদ্ধার্থ
রায়(সীধু), গৌরব চ্যাটার্জি(গাবু), চয়ন চক্রবর্তী, তিমির বিশ্বাস, কুণাল বিশ্বাস, সায়ান মিত্র, ভটা খ্যপা –র মত বাংলা ব্যান্ডের ৪৫ জন মিউজিসিয়ান যারা একসাথে পারফর্ম করলেন একই স্টেজে। বিকাল ৫টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
0 comments: