ছোটবেলায়
ইতিহাসের বইয়ের পাতায় আমরা দেখেছি,আদি মানবের ছবি। তাদের ব্যবহৃত
পাথরের অস্ত্রশস্ত্রের ছবি,দেখেছি শিলাচিত্র। প্রাগ ঐতিহাসিক যুগের এইসব
গুহাচিত্র যদি চাক্ষুষ দেখতে হয়, তাহলে যেতেই হবে মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকায়। ভোপাল থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দুরে,হশান্গাবাদ
রোডের ওপর অবস্থিত ভারতের এ ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। মহাভারতের ভীম থেকে
ভীমবেটকা কথাটি আসছে। যার অর্থ “ভীম-বিট-কা” অর্থাৎ ‘ভীমের বসার জায়গা’।
ভীমবেটকায়
প্রায় ৭০০টির মতো গুহা ও ৪০০টির মতো শিলা চিত্র আছে। কিছু কিছু গুহা আছে
হোমো-ইরেক্টস যুগের,প্রায় ১,০০,০০ বছর আগের। আর সবচেয়ে প্রাচীন
শিলা চিত্রটি প্রায় ১২,০০০ বছর আগের। সেই প্রস্থর যুগের কত নমুনা চারি পাশে
ছড়িয়ে রয়েছে এখানে,না দেখলে বিশ্বাস হয়না।
গুহা
চিত্র গুলিতে মূলত লাল ও সাদা রঙের ব্যবহার দেখা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সবুজ ও
হলুদ রঙের ব্যবহার ও দেখা গেছে। প্রস্থর যুগের মানুষরা তাদের দৈনন্দিন জীবনের
টুকরো টুকরো কিছু ছবি এই গুহাচিত্র গুলির মাধ্যমে প্রকাশ করে গেছে। যেমন-শিকার,সঙ্গীত ও
নৃত্য,ধর্মীয় অনুষ্ঠান,ঘোড়া ও হাতির পিঠে চড়া,যুদ্ধ, মধু
সংগ্রহ এবং আরও অনেক কিছু। বহু প্রাণীর ছবি ও দেখা যায় যেমন-বাইসন, হাতি, বাঘ, সিংহ, কুকুর,কুমির,ময়ূর,সাপ
ইত্যাদি।
আশ্চর্য
হয়ে দেখতে হয় এইটা ভাবলে যে এত বছর পরও শিলা চিত্র গুলির রঙ অক্ষত অবস্থাতে আছে।
মনের জিজ্ঞাসা গুলির উত্তর পেতে অবশেষে গুগলের শরণাপন্ন হলাম। খোঁজ করে জানতে
পারলাম আদি মানবরা
ম্যাঙ্গানিজ,হেমাটাইট,লাল পাথরের গুড়ো,কয়লার
গুড়ো ব্যবহার করে এই সব রঙ তৈরি করেছিলো। আর তার সাথে মিশিয়ে ছিল জন্তু-জানোয়ারের
ও গাছ লতাপাতার কিছু কিছু মিশ্রণ। পাথরের ওপর অবস্থিত কিছু অক্সাইডের সাথে এইসব
রঙের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে আজও অটুট আছে রঙ গুলি। সেই প্রস্থর যুগের মানুষ গুলি
কত কিছু জানত ভাবলেও অবাক করে।
যারা
ইতিহাস পছন্দ করেন,বলার অপেক্ষা রাখেনা,ভীমবেটকা তাদের ভালো লাগবেই।
তাছাড়া ভীমবেটকার চারিপাশের জঙ্গল,ছোটছোট পাহাড়,শান্ত,নিঝুম
পরিবেশ সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে । মনে হয় সময় যেন থেমে আছে এখানে।
ভোপাল থেকে বাসে অথবা গাড়ি বুক করে খুব সহজেই ঘুরে আশা যায় ভীমবেটকায়। নভেম্বর
থেকে মার্চ ঠাণ্ডার সময় ঘোরার জন্য ভালো। ভীমবেটকার গুহা গুলি ঘুরে দেখার সময় গাইড
নিতে ভুলবেননা যেন। গাইড ছাড়া অনেক কিছুই মিস হয়ে যেতে পারে এই হেরিটেজ সাইটে।
0 comments: