বীরভূমে
পর্যটন কেন্দ্র বলতে শান্তিনিকেতন আর বাদবাকি ধর্মীয় স্থান। বীরভূম জেলার পর্যটন
মানচিত্রে নতুন নাম শ্রীনিকেতন,বোলপুর ব্লকের রসুলপুর গ্রাম। যদিও বর্তমানে গ্রামটিকে সবাই ‘সবুজ বন’ বলেই চেনেন। সবুজ বন মূলত হরেক গাছের
সংগ্রহশালা। গাছ দিয়ে সাজানো ৮৫ বিঘা জায়গা ও ১৫ বিঘা জলাশয় প্রকৃতি-প্রেমিকদের
কাছে অসাধারণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
সবুজের
প্রতি যাদের বিশেষ দুর্বলতা আছে তাদের একবার আস্তেই হবে “সবুজ বন”। শুহুরে ধোঁয়ায় কাহিল শরীরকে ও
জানিলে নিতে পারেন সপ্তাহের শেষের দুটি দিন। শহুরে মানুষ ছাড়াও গাছপ্রমী গবেষকরা
মাঝে মধ্যে আস্তানা গাড়েন এখানে। দেখা যায় দেশীয় বহু নাম না জানা গাছ। এছাড়াও আছে
ব্রাজিলের ল্যাটিনিয়া লুব্রা,আফ্রিকার ৩৭ প্রজাতির সাইক্যাস,মেক্সিকোর নলিনাস,২৭৪টি প্রজাতির পামগাছ আর প্রচুর অ্যাডেলিয়াম গাছ। সবুজ বনের মালিক আব্দুস
সেলিম মতে,দেশ বিদেশের ৪২০০ প্রজাতির গাছ রয়েছে এখানে।
গাছগুলির বিন্যাসও শিল্পসম্মত। ১৭ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে নানা গাছের সমারোহ।
মানুষের তৈরি কৃত্রিম নদী আর সেই নদীর ওপর
বাঁশের সাকো দিয়ে পারাপার বেশ মজাদার। ইচ্ছে হলে করতে পারেন বোট বিহার। বার মাসে
আস্তানা করেছে কোকিল বাহিনী। তাদের কুহু রব আর দুর্লভ বাবুইয়ের ঝাঁকে ঝাঁকে তৈরি
বাসা। নদীতে চড়ছে রাজহাঁসের দল। ইতস্তত চড়ে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া কাঠবিড়ালি, বেজি বা নেউল। বনের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় দেশি কুকুর। সব মিলিয়ে এখানে
প্রকৃতি নিয়ে যাবে মনকে আরও অনেক প্রকৃতির গভীরে।
কটেজের
সামনে এক ফালি সবুজ ঘাসের গালিচা। তার ওপরে খালি পায়ে হাঁটতে হাটতে মনে পড়ে যায়
ছেলেবেলার ফেলে আসা দিনগুলি। শুধু এখন পা ধুলো হয়ে যাবে বলে বকার কেউ নেই। উদাস
স্মৃতিকে শান্ত মনে উপভোগ করতে মাঝে মাঝেই সুদৃশ্য ছাউনি আছে। রাতে টিমটিমে
বিদ্যুতের আলোয় পুকুরের ওপর বাঁশের মাচায় বসে আড্ডা মারা সাথে রাতের খাবার, একেই বুঝি বাঁচা বলে। সবুজ বনের সামনেই অজয়
নদ। তার পাড়ে বসেও কেটে যায় অনন্ত সময়। কাছের ইটিণ্ডা ও সুপুর গ্রামে কয়েকশো বছরের
প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরগুলি আকর্ষণীয়। তাদের ইতিহাস জানতে চাইলে অবশ্য শরণাপন্ন
হতে হবে বিশেষজ্ঞদের। স্থাপত্যের বিচারে এই ২টি মন্দির বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
কি ভাবে
যাবেন? কলকাতা থেকে ট্রেনে
বোলপুর স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। বোলপুর স্টেশন থেকে দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার।
গাড়ি ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকার মতো। আগে থেকে ফোন করে গেলে সবুজ বন কর্তৃপক্ষ গাড়ির
ব্যবস্থা করেন। বোলপুর থেকেও প্রচুর গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়।
বাসেও অবশ্য
যাওয়া যায়। বোলপুর- পাচশোয়া- ইক্ষুধারা রুটের বাস ধরে রসুলপুর মোড়ে নেমে ৫০০মিটার
হাঁটা রাস্তা।
কোথায়
থাকবেন? এখানে থাকার জন্য
রয়েছে মোট ৭টি কটেজ। এর মধ্যে দুটি বাতানুকূল। খড়ের ছাউনি দেওয়া সাধারণ কটেজগুলিতে
থাকাও আরামদায়ক।
বাতানুকূল
কটেজের প্রতিটির দৈনিক ভাড়া এক হাজার টাকা। দুটি কটেজে ৪ জন করে থাকা যায়।
৫০০ টাকায়
কটেজ রয়েছে ২টি। তাতে ৩ জন করে থাকা যায়।
এখানে সব
ধরনের খাবার পাওয়া যায় সুলভ মূল্যে। তবে খাওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে জানাতে হবে।
৭০০ টাকার
৩টি কটেজের প্রতিটিতে থাকা যায় ৪ জন।
যোগাযোগের
ফোন নম্বর: ৯৯৩২৫৮৯২৪৪(মোবাইল),
ল্যান্ড
ফোনের নম্বর : ০৩৪৬৩-৬৪৫০৩৫।
বিশেষ
সতর্কতা: বি এস এন এল মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া যায় না।
কোথায় কি? এক-দেড় কিলোমিটার দূরে ইটিণ্ডা ও সুপুর গ্রামে
কয়েকশো বছরের প্রাচীন টেরাকোটার মন্দিরও দেখে আসা যায়।
0 comments: