শিরোনাম

শীতে রাতের রূপচর্চা

সারাদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা নয়, শুধু রাতে বিশেষ করে শীতের সময় ৩০ মিনিট সময় এনে দিতে পারে আপনার জীবনে ত্বকের বার্ধক্যের ইতি। এমন কথাই বলছেন রূপ বিশেষজ্ঞরা। সারাদিনের কাজের ঝামেলায় বাদ যায় নিজেকে একটু টেক কেয়ার করার পালা। যার ফল পাওয়া যায় হাতে নাতে, অচিরেই দেখা দেয় ত্বক-চুলের নানাবিধ সমস্যা,আরও কত কিছু। ঠিক তখন এর আদর্শ সমাধান হতে পারে ঠিক ঘুমাতে যাওয়ার আগের সময় টুকুতে রূপচর্চার কাজটুকু সেরে রাখা। 
কেন জরুরী-
শীত কালে বাতাসের আদ্রতার ফলে ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই ত্বক সহ্য করে বেশি পরিমাণে ধুলোর প্রকোপ। অতএব,সারাদিনের জমে থাকা ময়লা এবং ব্যবহৃত মেকআপ ভালো করে ত্বক থেকে উঠিয়ে দেয়া জরুরী। মূলত এই কারণেই রাতে রূপচর্চার প্রয়োজন। পরিবেশ দূষণের ফলে মুখে জমা ধুলোবালি যদি ত্বকে থেকে যায় তাহলে ত্বকের করুন দশার কথা সকলেই জানেন। ময়লা তুলে না ফেললে ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে ত্বকের স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের অভাব ঘটবে যাতে ব্রণ, ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস বা ত্বকের আরও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোদ ত্বকের জন্য অনেক সময় ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। রাতে সে সম্ভাবনা অনেক কম, তাই তখন কিছু লাগালে পরিষ্কার ত্বকের উপর তা আরও ভালোভাবে কার্যকরী হয়। ঘুমন্ত অবস্থায় মেটাবোলিজমও কম হয়,ত্বক থাকে অনেক আরামে। এছাড়াও ৭-৮ ঘণ্টা টানা ঘুমানোর কারণে ক্রিম কার্যকর হবার মতো সময় পায়। যা দিনের বেলা হাজার কাজকর্মের মাঝে অসম্ভব। কাজেই ত্বকের পুষ্টি ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য প্রসাধন ও পরিচ্ছন্নতা রাতে করাই যুক্তিযুক্ত। তবে যদি দিনেও দুই একবার মুখ পরিষ্কার করে নেওয়া যায়, তবে রাতের রূপচর্চা আরও কার্যকর হবে।
করনীয় বিষয়-
    কখনওই মেকআপ না তুলে ঘুমাতে যাবেন না। মেকআপ যখনই করুন,মুখ পরিষ্কার করতে হবে তা না হলে ত্বকের ক্ষতি হবে।
    কি ধরনের ক্রিম ব্যবহার করবেন সেটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কতটা ক্রিম ব্যবহার করেন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কম ক্রিম ব্যবহার করতে হয়। তবে যাদের ব্রণ আছে তাদের নাইট ক্রিম ব্যবহার না করাই ভালো। শুষ্ক ত্বকের জন্য বেশি পরিমাণে ক্রিম প্রয়োজন।
    নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাও অত্যন্ত জরুরী। সারাদিনে ত্বক থেকে ময়েশ্চার নষ্ট হয়ে যায়, রাতে তা না হলে ত্বকে বলিরেখা পড়বে। যারা বাড়ির কাজ করেন, প্রত্যেকবার হাত ধুয়ে নিলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ও বলিরেখা পড়ে। তাই নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার। এতে ত্বকে পুষ্টি যোগায়।
    নিয়মিত জল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পেট পরিষ্কার রাখার জন্যও জল একান্ত প্রয়োজনীয়।
    রাতে খাওয়ার পর খেতে পারেন এক কাপ চায়নিজ জেসমিন টি, এতে শরীরে মেদ জমবে না। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস জল খেয়ে নিন।
ত্বক- সুন্দর ত্বকের মূলমন্ত্রই হলও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। আমাদের গরমের দেশে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় ত্বক তেলতেলে ও আর্দ্র হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে মৃদু সাবান ও জল দিয়ে মুখ ধোয়া খুব ভালো। অবশ্য শুষ্ক ত্বকে সাবানের বদলে ক্লিঞ্জিং লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা উচিত ভিজে তুলো।
    প্রথমে মুখ ধুয়ে নিন ত্বকের উপযোগী কোনও ফেসওয়াশ দিয়ে। স্পর্শকাতর ত্বক হলে ব্যবহার করতে পারেন ভেষজ ফেসওয়াশ।
    এরপর ব্যবহার করুন ফেসপ্যাক। ঘরেই তা বানাতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের জন্য ১ চা চামচ টকদই ও ১ চা চামচ দুধের সর বা দুধ।
    তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের জন্য: ১ চা চামচ টকদই ও ১ চা চামচ লেবুর রস।
    এগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। পুরোটা শুকাবেন না,অর্ধেক শুকিয়ে এলে মুখ হালকা ঘষে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকে মেশাতে পারেন গোলাপজল,যা সব ধরনের ত্বকের জন্য ভালো।
    ময়েশ্চারাইজার হিসেবে শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা ভেজা মুখে স্রেফ ২-৩ ফোঁটা যে কোনও বেবি অয়েল মেখে নিন। তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করাই উচিত।
    রাত্রে লাগানোর ক্রিম ভিটামিন ই যুক্ত হলে উপকার হয়। কারণ ভিটামিন ই ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে। এছাড়া ক্রিমের মধ্যে এই ভিটামিন মেশানো থাকলে, ক্রিমটি অনেকদিন পর্যন্ত ভালো ও ব্যবহারযোগ্য থাকে।
    যাদের ত্বক তৈলাক্ত ও ব্রণ আছে, তারা প্যাক ধুয়ে ফেলে ময়েশ্চারাইজারের বদলে ব্যবহার করুন অ্যাসট্রিনজেন্ট। ঘরোয়া অ্যাসট্রিনজেন্ট হলও গোলাপজল ও শশার রস। শশার রস করে বরফ জমানোর পাত্রে রেখে আইস-কিউব করে নিতে পারেন। প্রতি রাতে রস বানানোর ঝামেলায় না গিয়ে একটি কিউব মুখে ঘষে নিন।
    সমপরিমাণে পুদিনা পাতা ও নিমপাতা বেটে শুধু ব্রণ ও দাগের উপর লাগিয়ে ঘুমান। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন ফেসপ্যাকেও। ব্রণের জন্য ভীষণ উপকারী।
চোখ- চোখের ডার্ক সার্কেল কমাতে ঘুমানোর আগে কুরানো শশা বা আলু ঠাণ্ডা হলে ভালো বা ঠাণ্ডা টি-ব্যাগ চোখের উপর দিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট।
হাত ও পা- প্রতি রাতে পা ধুয়ে লোশন লাগিয়ে ঘুমাতে যান। এছাড়া নিয়মিত যত্ন হিসেবে সপ্তাহে দু-একবার যেটা করতে পারেন তা হলও, রাতে পা প্রথমে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে, ২ টেবিল চামচ কুসুম গরম অলিভ অয়েল ও ১ চা চামচ নুনের মিশ্রণ তৈরি করে সেটা পায়ে ভালো করে মাসাজ করুন। এতে মৃত কোষ ঝরে যাবে,গোড়ালি নরম হবে,রক্ত চলাচল ভালো হবে। এর বদলে মুখের জন্য যে স্ক্রাব ব্যবহার করেন,তা দিয়েও মাসাজ করতে পারেন। হাতের যত্নও নিতে পারেন একইভাবে। মুখ,হাত,পা যে কোনও মাসাজই করতে হবে হালকা হাতে, আলতোভাবে। তা না হলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
চুল- যাদের বড় চুল,তারা বেণী করে নিন ঘুমানোর আগে। তাতে চুল সারা রাত ঘষা খাবে না। ছোট চুল হলে খোলা রেখে শুলেও অসুবিধা নেই। তেল মাসাজ করে শুলে ঘুম ভালো হবে।
নখ- নখ ফেটে বা ভেঙে যাওয়ার সমস্যা কমাতে ঘুমানোর আগে হাত-পায়ের নখে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিন। সারা রাত নখ আর্দ্রতা পাবে।
ঠোঁট- নরম গোলাপি ঠোঁট পেতে প্রতি রাতে ভ্যাসলিনের সঙ্গে অল্প নুন মিশিয়ে ঠোঁটে ম্যাসাজ করে ধুয়ে নিন। এতে ঠোঁটের মৃত কোষ ঝরে উজ্জ্বলতা আসবে।

নিয়মমাফিক পরিচর্যা,সুষম খাবার,সুন্দর জীবনযাপন আপনাকে ভালো ও সুস্থ রাখবে আর সুস্থতা প্রতিফলিত হবে আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্যে। তাই আপনার বিরামহীন কর্মব্যস্ততার মধ্যেও ঘুমের আগে এটুকু ঘরোয়া পরিচর্যায় আপনি থাকবেন একদম সুস্থ,প্রাণবন্ত,সুন্দর।

0 comments: