বিষণ্ণতা এক ভয়াবহ সমস্যা এখনকার সমাজে। আপাত নিরীহ চেহারার হলেও এই
সমস্যা ডেকে আন্তে পারে কিছু অস্বস্তিকর পরিস্থিতির। কমিয়ে দিতে পারে শারীরিক ও
মানসিক কর্মক্ষমতা। কি ভাবে চিহ্নিত করবেন এই সমস্যাকে যাতে রুখে দিতে পারেন এর
থকে আশা বড় কোন ব্যাধি। যেনে নেওয়া জাক সেই লক্ষণ গুলো যা বিষণ্ণতার সূত্রপাত
ঘটায়।
উষ্ণতা- প্রচণ্ড শীতের কারণে লোকজন প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগে।
গবেষণায় যানা যাচ্ছে,শীতে মানুষের কম পরিশ্রম করার ফলে শরীর ও মন হঠাৎ গরম
আবহাওয়ার সাথে তালমেলাতে পারে না ফলে তা একসময় বিষণ্ণতায় রূপ নেয়।
ধূমপান- ধূমপান ও বিষণ্ণতা পরস্পরের পরিপূরক। বিষণ্ণ মানুষ ধূমপান করে
নিষণ্ণটা কাটাতে। আবার ধূমপান ছাড়ার ফলেও বিষণ্ণতা আসে। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি
ডাক্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই উচিৎ।
থাইরয়েড- থাইরয়েডের প্রভাব ও বিষণ্ণতা তৈরি করে। থাইরয়েড হরমোন আমাদের
শরীরে যে সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, তার মধ্যে একটা হল মস্তিষ্ক সচল রাখা।
ঠাণ্ডা,পরিশ্রম বা অন্য কোন কারণে থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে
বিষণ্ণতা আসতে পারে।
ঘুমের স্বল্পতা- আম ঘুম মেজাজ খিটখিটে করে দেয় যা বিষণ্ণতা ডেকে আনে।
গবেষক ম্যাথু এডলান্ড তার পাওয়ার অফ রেস্ট বইয়ে লিখেছেন,“আপনি যদি না ঘুমান এবং আপনার
স্নায়ুগুলিকে সতেজ হবার সুযোগ না দেন,তবে আপনার মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবে কাজ
করবে না এবং আপনি বিষণ্ণতায় ভুগবেন।”
অতিরিক্ত সোশাল নেটওয়ার্কিং এর ব্যবহার- বিষয়টি বিশ্বাস যোগ্য না হলে
সত্যি। অনেকক্ষণ ধরে সোশাল নেটওয়ার্কিং-এর মাধ্যমে চ্যাট করলে আপনাকে বিষণ্ণতা ভর
করতে পারে। অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায়। ২০১০ সালে একটি
গবেষণায় ১৬-৫১ বছর বয়সীর মধ্যে ১.২ ভাগ মানুষ যারা ইন্টারনেটে অনেক বেশি সময় কাটায়
তারা অতিমাত্রায় বিষণ্ণতায় আসক্ত। তবে এই বিষয়ে সন্দেহ আছে যে ইন্টারনেট
ব্যবহারকারীরা বিষণ্ণতায় ভোগে,নাকি বিষণ্ণ ব্যক্তিরাই বেশি ইন্টারনেট
ব্যাবহার করে।
বিনোদনের প্রভাব- প্রিয় কোন টিভি প্রোগ্রাম বা মুভি যখন শেষ হয়ে যায় তখন
অনেকেই বিষণ্ণ বোধ করে। হ্যারি পটার সিরিজের ও ২০০৯ সালে অ্যাভাটার ছবির শেষ
বেলায়ও দর্শকের মধ্যে বিষণ্ণতা উৎস পাওয়া যায়। কেউ কেউ বাস্তব জীবনের সমস্যার
সমাধান সিনেমার মতো আশা করে আর তা না হলে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়।
বাসস্থান- গবেষণায় যানা যায়, গ্রামের মানুষের চেয়ে শহরের মানুষ ৩৯ %
বেশি মানসিক চাপে থাকে। Nature,২০১১ সালে প্রকাশ করে যে,শহরের মানুষের কাজের চাপ মানসিক চাপ বাড়ায়। অধিক মানসিক চাপ একসময় মানসিক
রোগের সূচনা ঘটায়। একটি দেশের আর্থিক অবস্থানের উপরেও সে দেশের মানুষের মানসিক
অবস্থা নির্ভর করে। সাধারণ ভাবে আর্থিক সচ্ছল দেশের থেকে গরিব দেশের মানুষ কম
বিষণ্ণ। অন্যদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতর স্থানের মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা ও
আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।
পছন্দের জিনিস বাছাই-মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা পছন্দের জিনিস
বাছতে দ্বিধায় ভোগেন না তাদের এই সমস্যা হয়না।কিন্তু যারা সবচেয়ে ভালোটা বেছে নিতে
দ্বিধায় পড়েন বা অন্য কাউকে অনুকরণ করতে চান তারা বিষণ্ণতায় ভোগেন ।
ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া- অনেক ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে
বিষণ্ণতা। বিষণ্ণতা বা আত্মহত্যার প্রবণতা কিছু মানুষের মধ্যে আগে থেকেই থাকে যা
ওষুধ গ্রহণের বেড়ে যায়। দুশ্চিন্তা কমানোর বা ঘুমের ওষুধ,প্রেসারের ওষুধ,কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ বিষণ্ণ হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে
ডাক্তারের পরামর্শ একান্ত জরুরি।
0 comments: