গত ১৯শে এপ্রিল প্রথম ফটোগ্রাফির স্টুডিও
তে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল অভিনব একটি ফটোগ্রাফি ওয়ার্কশপ। ওয়ার্কশপটির সাবজেক্ট ছিল ‘বডি পেইন্টিং’। প্রথম ফটোগ্রাফির
কর্ণধার বিখ্যাত ফটোগ্রাফার প্রতাপ দাশগুপ্তর তত্বাবধানে আমরা দেখলাম যে মানুষের শরীরে
রঙের প্রলেপ দিয়ে তাকে কিভাবে জীবন্ত মূর্তিতে পরিণত করা যায়। আর তার সাথে আরও দেখলাম
যে অঙ্কন শিল্পের সাথে চিত্রশিল্পের মেলবন্ধন কিভাবে ঘটে।
‘বডি পেইন্টিং’ প্রধানত ন্যুড স্টাডিজের একটি ‘ঘরানা’। আর ‘ন্যুড’ কথাটি তথাকথিত
রুচিশীল বাঙ্গালির ‘ভ্রু’ অজান্তেই একটু কুঁচকে যায়। কিন্তু সারা পৃথিবী জুড়েই ‘রেনেসাঁ’এর মূল বিষয়
ছিল এই ন্যুড স্টাডি। মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ‘ডেভিড’ তার একটি
বিখ্যাত উদাহরণ। কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য শিল্প-কলায় উন্নত শহরগুলির তুলনায় কলকাতায়
এই ‘ন্যুড স্টাডিজের’ পরিসর অনেক কম। তাই প্রতাপ দাশগুপ্তর এই ওয়ার্কশপ একটি ব্যতিক্রমী
প্রয়াস যা ভবিষ্যতে শিল্পীদের এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে অনেক উৎসাহের যোগান দেয়।
প্রতাপ দাশগুপ্তর এই প্রয়াসে আশাতীতভাবে
সাড়া দেখা গেছে বাঙালি চিত্রশিল্পীদের মধ্যে। বাংলাজিনকে তারা জানালেন ন্যুড স্টাডি
নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা এবং উৎসাহের কথা।
কৌশিক মন্ডলঃ ফেসবুকে এরকম একটা ওয়ার্কশপ
হচ্ছে দেখেই খুব উৎসাহিত হয়ে পড়ি। সঙ্গে সঙ্গে প্রতাপ দা কে ফোন করি। এই ওয়ার্কশপটা
অন্যান্য পাঁচটা ওয়ার্কশপ থেকে একদম আলাদা। ন্যুড স্টাডি খুব চ্যালেঞ্জিং সাবজেক্ট।
একটু উনিশ-বিশ হলেই এটা একটা ‘ভালগার’ সাবজেক্ট হয়ে যাবে। তাই অনেক লিমিটেশনের মধ্যে থাকতে হয়। ন্যুড
স্টাডি কে কিভাবে ক্রিয়েটিভ ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয় এই ওয়ার্কশপে এসে আমার সেই বিষয়ে
একটা সম্যক ধারণা তৈরি হল।
যুগল দাসঃ প্রায় এক বছর ধরে আমি প্রতাপদার
কাজের সাথে পরিচিত। প্রতাপদার অন্য বিষয়ের ওয়ার্কশপ গুলিতে যোগদান করলেও নুড আর্ট বা
বডি পেন্টিং নিয়ে এই প্রথম কাজ। এই ধরনের কাজের সাথে আমার কোন পরিচয়ই ছিলনা এই ওয়ার্কশপ
এর আগে। প্রতাপদা কে অসংখ্য ধন্যবাদ এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
রচিস মজুমদারঃ কোলকাতায় বসে এমন একটা
সুন্দর সুযোগ পাব ভাবতে পারিনি। তা ছাড়া প্রতাপ স্যার ‘নুড স্টাডির’ মত বিষয়টিকে
এত সুন্দর ভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরছেন যে এই কঠিন বিষয়টি আর তেমন কঠিন থাকছে না।
যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল স্যালনে আমি যোগদান করি, সেক্ষেত্রে তার মান বজায় রেখে কাজ করতে
গেলে এত দিন পর্যন্ত কোলকাতার বাইরে দিল্লী, মুম্বাই যেতে হতো। কিন্তু এখন সেই সুযোগ
হাতের কাছে পাওয়াতে খুব উপকার হল।
সঞ্চয় চক্রবর্তীঃ মানুষের শরীরকে ধীরে
ধীরে রং এর মাধ্যমে একটি মূর্তিতে পরিণত করার এই প্রয়াস সবসময় আমাকে নাড়া দেয়। এই ওয়ার্কশপে
এসে সেই অনুভূতি, সেই কাজ করার ইচ্ছা আরও বেড়ে যায়। আমার করা কাজের ঠিক ভুলটি পুরোটাই
সুন্দর করে চোখের সামনে পরিষ্কার হয়ে ওঠে সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে। এই রকম পদক্ষেপ
আমার কাজের দৃঢ়তাকে আরও বেশী করে বলিষ্ঠ করে।
সৌগত লাহিড়ীঃ প্রতাপদার কাজ দেখার
আগ্রহ থেকেই আমি প্রতাপদা কে খুঁজে নি। তারপর থেকে নিয়মিত প্রতাপদার ওয়ার্কশপ এ আশা
শুরু করি। কমার্শিয়াল ভাবে নুড ফটোগ্রাফিকে কিভাবে ব্যাবহার করা যায় তার একটি সুন্দর
উদাহরণ পাওয়া গেল প্রতাপদার কাজের মাধ্যমে।
দেবাশিস পাইকঃ আমরা যারা নুড আর্ট
নিয়ে কাজ করি তাদের চিন্তা থেকে সাধারনের চিন্তা এই বিষয় নিয়ে
সম্পূর্ণ আলাদা। আলো আর রঙের খেলার মাধ্যমে মানুষের শরীর কিভাবে বাস্তব থেকে পার্থিব
সৌন্দর্য লাভ করে তার ধারণা পাওয়ার মাধ্যম হল ফটোগ্রাফির এই বিশেষ আর ঘরানাটি।
0 comments: