ছবি-গুগল |
কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ
পরিবারে ১৮৬৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম। পিতৃদত্ত নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তাঁর চিন্তাচেতনার
অন্যতম অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর যুক্তিবাদী পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ও ধর্মপ্রাণা জননী ভুবনেশ্বরী
দেবী ।বিবেকানন্দ
বলেছিলেন, "আমার জ্ঞানের বিকাশের জন্য আমি
আমার মায়ের কাছে ঋণী।"ছেলেবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে অধ্যাত্মপিপাসা ও গভীর ঈশ্বরানুরাগ
লক্ষিত হত। ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করেছেন এমন এক
ব্যক্তির সন্ধানে বেরিয়ে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের সান্নিধ্যে আসেন এবং পরে তাঁর শিষ্যত্ব
গ্রহণ করেন। গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে অদ্বৈত
বেদান্তের শিক্ষা দেন। তাঁর কাছ থেকেই বিবেকানন্দ শেখেন
যে সব ধর্মই সত্য এবং মানুষের সেবাই সর্বোৎকৃষ্ট ঈশ্বরোপাসনা। গুরুর মৃত্যুর পর সন্ন্যাস অবলম্বন করে তিনি সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ পদব্রজে
পর্যটন করেন। পরবর্তীকালে শিকাগো যাত্রা করে
১৮৯৩ সালের বিশ্বধর্ম মহাসভায় হিন্দুধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ইউরোপের অন্যান্য শহরে তিনি শতাধিক সাধারণ ও ব্যক্তিগত বক্তৃতা ও ক্লাসের মাধ্যমে
হিন্দু দর্শনের মূল ধারণাগুলি সম্পর্কে পাশ্চাত্যবাসীকে অবহিত করে তোলেন।
বিবেকানন্দকে একজন বিদ্রোহী সন্ন্যাসী
মনে করা হয়।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ফোরাম, বিশ্ববিদ্যালয় ও সংঘ তাঁর বাগ্মীতায় মুগ্ধ হয়ে বক্তৃতাদানের আমন্ত্রণ
জানান। একাধিক সাধারণ ও ব্যক্তিগত সভায়
ভাষণ দিয়ে তিনি আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও
আরও কয়েকটি দেশে বেদান্ত, যোগশাস্ত্র ও হিন্দুধর্মকে সুপরিচিত
করে তোলেন। আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে তিনি স্থাপন
করেন বেদান্ত সোসাইটি। ভারতে প্রত্যাবর্তন করে ১৮৯৩ সালে
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন নামে একটি মানবকল্যাণমূলক আধ্যাত্মিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। স্বামী বিবেকানন্দ ভারতে অন্যতম জাতি-স্রষ্টারূপে পরিগণিত হন।
মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে বিবেকানন্দ
কিছু দিন মায়াবতীর অদ্বৈত আশ্রমে এবং পরে বেলুড় মঠে অতিবাহিত করেন। অতঃপর শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বেলুড় মঠে অবস্থান করে রামকৃষ্ণ
মিশন ও মঠের কাজ এবং ইংল্যান্ড ও আমেরিকার কাজ দেখাশোনা করে অতিবাহিত করেন। গোয়ালিয়রের মহারাজাসহ এ বছরগুলিতে হাজার হাজার দর্শক তাঁকে
দেখতে আসেন। ১৯০১ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে দেখতে
আসেন লোকমান্য তিলকসহ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃস্থানীয়রা। জাপানের ধর্ম মহাসভায় যোগ দেয়ার জন্য তিনি ১৯০১ সালের ডিসেম্বরে
আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন,কিন্তু তাঁর
ভগ্ন স্বাস্থ্য সেটি অসম্ভব করে তোলে। তাঁর শেষ দিনগুলিতে তিনি বোধগয়া ও বারাণসী তীর্থ করেন।
তাঁর দেহ ত্যাগ করার দিন তিনি বেলুড়
মঠে সকালে কিছু ছাত্রকে শুক্লা-যজুর্বেদ
শেখান।তিনি ভ্রাতা-শিষ্য স্বামী
প্রেমানন্দের সাথে হাটেন এবং তাকে রামকৃষ্ণ মঠের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নির্দেশনা দেন। বিবেকানন্দ ধ্যান করার সময় ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই রাত ৯টা
১০ মিনিটে দেহ ত্যাগ করেন। তাঁর শিষ্যদের
মতে এটা ছিল মহাসমাধি।পরবর্তীতে তাঁর শিষ্যগণ লিপিবদ্ধ করেন যে তারা স্বামীজির নাসারন্ধ্র, তাঁর মুখ এবং চোখে "সামান্য
রক্ত" লক্ষ্য করেছেন।ডাক্তাররা মন্তব্য করেন যে এটি
হয়েছে তাঁর মস্তিষ্কে একটি রক্তনালী ফেটে যাবার কারণে,কিন্তু তারা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বের করতে পারেননি। তাঁর শিষ্যদের মতানুসারে ব্রহ্মরন্ধ্র-মস্তিষ্কের চূড়ার রন্ধ্র-অবশ্যই
ফেটে থাকবে যখন তিনি মহাসমাধি অর্জন করেছিলেন। বিবেকানন্দ তাঁর চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত বেচে না থাকার তাঁর নিজের ভবিষ্যৎবাণী
পূরণ করেছিলেন। তাঁর জন্মদিন ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়।
************************
No comments:
Post a Comment