শিরোনাম

স্কুলবাড়ীটা

সেকেন্ড পিরিয়ডের ঘন্টা বাজার আগেই ক্লাসের বাইরে হঠাৎ একটা হৈচৈ শুরু হয়ে গেল। সবাই তাড়াতাড়ি দৌড়ে বাইরে বেড়িয়ে এসে দেখল একটা বাদামী রঙের বাজখাই গরু ৪ বি-র পাশের ফাকা ক্লাসরুমটায় ঢুকে নির্লিপ্ত মুখে দাড়িয়ে জাবর কাটছে! হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে সে ভেবেচিন্তেই ক্লাসে ঢুকেছে এবং এখন স্যারের জন্য অপেক্ষা করছে। স্যারেরা সব হন্তদন্ত ক্লাস থেকে বেড়িয়ে এলেন। চিৎকার, চেঁচামেচি, ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেল চারিদিকে। এ সবের ফলে সবচেয়ে যেটা উপকার হলো সেটা হচ্ছে সেকেন্ড পিরিয়ডটা তালেগোলে বানচাল হয়ে গেল।ভবানীবাবুর অঙ্ক ক্লাস ছিল। হাবুল আজ আবার হোমওয়ার্ক করে আসেনি। স্কুলেআসা ইস্তক ভবানী বাবুরভয়ে তার পেট গুড়গুড় করে গলা শুকিয়ে আসছিল। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে হাতটা একটু কপালে ছোঁয়ালে।ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন।
বারান্দায় হেডস্যারের চেহারাটা দেখা দিতেই একদৌড়ে বারান্দা ফাঁকা। ক্লাসে ফিরে এসে দরজার কোণ থেকে উঁকি দিতে লাগলো সবাই।
"
বিপিন কই? বি পি ন ......"
ভোজবাজির মতো এক নিমেষে বিপিনদার উদয় হলো।
"
আজ্ঞে স্যার "
"
এটা কার গরু ? স্কুলে ঢুকলো কি করে?"
"
আজ্ঞে রামখিলাবনের। ওই সামনের মাঠটায় ঘাস খাচ্ছিল সকালে। আমি একটু গেছিলাম স্বপন বাবুর একটা চিঠি নিয়ে পোস্টআপিসে। এসে দেখি এই কান্ড ! আমি এখনি তাড়িয়ে দিচ্ছি।এই, হ্যাট, হ্যাট। .. এই হ্যাট .."
রামখিলাবনের গরুটা একবার তাকিয়ে শুধু বিপিনদাকে দেখল। ভাবগতিক দেখে মনে হয় শুধালো "টুপি আবার কোথায় পেলে হে, সবার তো খালি মাথা।"
তারপর আবার নির্বিকার মুখে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে জাবর কাটতে লাগলো। যেন ক্লাসের মাঝে ডাকায় তার ভারী বিরক্তি হয়েছে।
বিপিন দা হেডস্যারের দিকে তাকিয়ে যে হাসিটি দিলে তার মানে দাড়ায় "কি করি বলুন, এ দেখি একেবারেই গরু! "
শেষমেষ রামখিলাবন নিজেই এসে হেডস্যারের কাছে অনেকবার "গলতি হো গ্যায়া , গলতি হো গ্যায়া " বলে টলে তার গরুটাকে বিস্তর বকাবকি করতে করতে নিয়ে চলে গেল। আর সেও বকা খেয়ে মাথা টাথা নেড়ে রামখিলাবনের সাথে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল।এ যাত্রা তার আর স্কুলে পড়া হলনা।

সেদিন স্কুল ছুটির পর স্বপনবাবু হাবুলদের সাথেই ফিরছিলেন।
"
সেদিন ক্লাস ফাইভে লাস্ট পিরিয়ডে গিয়ে অঙ্ক দিয়েছি। চারজনের উত্তরে বাবার বয়স ছেলের থেকে কম এসেছে। গরুটা ভুল কিছু করেনি। শুধু এক ক্লাস নীচে ঢুকেছিল। " বলে তিনি হনহন করে দুর্গামন্দিরের বাঁ দিকের রাস্তা ধরে মিলিয়ে গেলেন।
*******************
লেখক উবাচঃ সে অনেক দিন আগের কোনো এক ফেলে আসা সময়ের কথা। ষাটের দশকের মাঝামাঝি মফস্বলের এক স্কুলের গল্প। নাসেটা আমার স্কুল ছিল না। আমি সেই স্কুলের কথা শুনেছি। সেই গল্পগুলোকে জুড়তে বসেছি আজ। স্মৃতির ফাঁকফোকড় কল্পনা এসে ভরাট করে নিয়েছে।

ছবি ও লেখা-শিবতোষ সিনহা 
[লেখক পরিচিতি-পেশাগত ভাবে  শিক্ষকতা  দিয়ে  শুরু  করে  তারপর  সফটওয়্যার  ইঞ্জিনীয়ারআর  নেশাগতভাবে সাহিত্যরসিক এবং লেখক। সঙ্গীত ও নাট্যপ্রেমী। লেখার শুরু সেই ছোটবেলায় বাড়ির খাতার পিছনেরপাতা থেকে। সেই থেকে আজ অবধি ভাবনা আর স্বপ্নের আঁকিবুকি আলপনা চলছে।]

0 comments: