সরস্বতী পূজা হিন্দু
বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠেয় একটি অন্যতম প্রধান
উৎসব। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে বিভিন্ন শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থের ঘরে মা সরস্বতীর পূজা আয়োজিত হয়। তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত।
তাই জন্য সরস্বতী পূজাকে অনেক ক্ষেত্রে বাসন্তী পূজাও বলা হয়ে থাকে।
সরস্বতী বৈদিক দেবী
হলেও সরস্বতী পূজা বর্তমান রূপটি আধুনিক কালে প্রচলিত হয়েছে। তবে প্রাচীন কালে তান্ত্রিক
সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়। ঋগ্বেদে তিনি বৈদিক সরস্বতী নদীর অভিন্ন এক রূপ।
তিনি হিন্দু সৃষ্টি দেবতা ব্রহ্মার পত্নী এবং লক্ষ্মী ও পার্বতীর সঙ্গে একযোগে ত্রিদেবী
নামে পরিচিতা। এই ত্রিদেবী যথাক্রমে ত্রিমূর্তি
সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পালন কর্তা বিষ্ণু ও সংহার কর্তা শিবের পত্নী। হিন্দুদের বিশ্বাস,
সরস্বতী প্রাচীনতম হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ প্রসব করেন। হিন্দুধর্ম ছাড়াও খ্রিস্টীয়
চতুর্থ-পঞ্চম শতকে রচিত মহাযান বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ মহাযান সূত্র –এও সরস্বতীর উল্লেখ পাওয়া যায়। দেবী সরস্বতী আদ্যন্ত
বিহীনা, শ্বেতপদ্মে আসীনা, শ্বেতপুষ্পে শোভিতা, শ্বেতবস্ত্র-পরিহিতা এবং শ্বেতগন্ধে
অনুলিপ্তা। অধিকন্তু তাঁহার হস্তে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা, তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা,
শ্বেতবীণাধারিণী, শুভ্রবর্ণা এবং শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা। ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায়
উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভুজা এবং ময়ূরবাহনা। উত্তর
ও দক্ষিণ ভারতেই সাধারণত: দেবীর এই রূপটি দেখা যায়। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও
বেদপুস্তকধারিণী। বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী
দ্বিভুজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা। ইনি বীণাধারিনী অর্থাৎ বীণাপাণি।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে
পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির উপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম
রেখে সরস্বতী পূজা করার প্রথা ছিল। শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্রেরা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত
গ্রন্থ, শ্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করত। ইংরেজি ম্লেচ্ছ ভাষা হওয়ায় সরস্বতী
পূজার দিন ইংরেজি বইয়ের পূজা নিষিদ্ধ ছিল। গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা বিংশ শতাব্দীতেও প্রচলিত
ছিল। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।
তবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে সরস্বতী পূজা বিদ্যার আরাধনার সাথে সাথে প্রেমের
উৎসবেও পরিণত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে পালিত প্রেম দিবস ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ –এর কয়েক দিন আগেই বাঙালিরা বছরের প্রথম উৎসবটিকে বাংলার
‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হিসাবেও পালন করে থাকে।
No comments:
Post a Comment